চিকিৎসা শাস্ত্রের বিরল ঘটনার প্রতিযোগিতা – বিশ্ব সেরা বাংলা
কিছুদিন আগে ইউরোপের বিশ্বখ্যাত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় সারা পৃথিবীর বিরল থেকে বিরলতম অসুখের ঘটনা বা ‘কেস হিস্ট্রি’ নিয়ে অনলাইনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।

চিকিৎসায় বাংলায় সেই পৃথিবীজোড়া নামডাক কি ধীরে ধীরে ফিরছে? কোভিড (Covid 19) পর্বে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে অসংখ্য রোগীকে বাড়ি ফিরিয়েছেন বাংলার ডাক্তাররা। এবার চিকিৎসা শাস্ত্রে বিরল ঘটনার পৃথিবীব্যাপী প্রতিযোগিতায় সেরা ‘কেস’ বা ঘটনাবলির তালিকায় উঠে এল বাংলার নাম। কিছুদিন আগে ইউরোপের বিশ্বখ্যাত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় সারা পৃথিবীর বিরল থেকে বিরলতম অসুখের ঘটনা বা ‘কেস হিস্ট্রি’ নিয়ে অনলাইনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে জমা পড়েছিল নানা বিরল ঘটনার ইতিবৃত্ত। সবসুদ্ধ প্রায় ৪০০টি বিরল ঘটনা থেকে ফাইনাল রাউন্ডে উঠল ২১টি ‘কেস’। সেরাদের মধ্যে সেরার সেই তালিকায় দু’টি ঘটনা রয়েছে ভারত থেকে। আর সেই দু’টিই বাংলার। একটি পিজি হাসপাতালের, অন্যটি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের। নির্বাচিত হয়েছেন দুই তরুণ চিকিৎসক। পিজি হাসপাতালের পিজিটি ডাঃ করিমুল্লা মণ্ডল এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ তনুকা মণ্ডল। দু’জনের পেশ করা ঘটনা দু’টি হল স্ক্রাব টাইফাসের দু’টি বিরল ‘কেস’। একটিতে স্ক্রাবের জন্য রোগীর শরীরে বিরল স্নায়বিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।
অন্যদিকে, স্ক্রাব টাইফাসের সঙ্গে রোগীর প্রাণঘাতী হার্টের অসুখ মায়োকার্ডাইটিস, লিউকোমিয়া ও অ্যাকিউট লিভার ফেলিওরের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এই চূড়ান্ত পর্বে ওঠা দেশগুলির তালিকায় বাংলা তথা ভারত ছাড়াও এশিয়া থেকে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। রয়েছে ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, লাটভিয়া, ইস্তোনিয়া প্রভৃতি দেশও। বাংলার চিকিৎসকদের এই কাজের কথা জেনে উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্যদপ্তর। উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম সামগ্রিকভাবে এখানকার চিকিৎসক সমাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিকে, এই ২১ জনকে নিয়ে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেস্ট কেস কমপিটিশন’-এর ফাইনাল হল শুক্রবার সন্ধ্যায়।
শেষ পর্যন্ত কোন দেশের কোন ঘটনা শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেল, তা জানা যাবে আজ। নির্বাচিত দুই তরুণ চিকিৎসকের অন্যতম তনুকা জানান, বিশ্বের দরবারে বাংলায় হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমার উপস্থাপনা করা ঘটনাটি ২০০০ সালের প্রথমদিকের একটি বিরল ‘কেস’। এক্ষেত্রে এক ব্যক্তি জ্বর, বমি ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরও সমস্যা না মেটায় আর জি করে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, বমি ইত্যাদি ছিল, তারপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতেন। আমাদের টিম অনুমান করে, এটি স্ক্রাব টাইফাসের ঘটনা।
স্ক্রাব টাইফাসে অল্প কিছু ক্ষেত্রে জটিল স্নায়বিক সমস্যা হয়। ওঁর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। পাশাপাশি এর জন্য একটি অতি বিরল উপসর্গ দেখা যায় ওঁর চোখে। দু’চোখের মণি দু’টি অস্বাভাবিকভাবে ঘুরতে থাকত। এই সমস্যার নাম ‘অপসোক্লোনাস’। সামগ্রিক চিকিৎসার পর উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি যান।