ক্ষুদ্র-শিল্প ঋণেও বঞ্চিত বাংলা

কেন্দ্রের ঘোষিত প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার পশ্চিমবঙ্গ। ছোট শিল্পকে ‘ভাতে মারা’র এই চেষ্টাকে ভালো চোখে দেখছে না শিল্পমহল।

October 11, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজেও বঞ্চিত বাংলা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর ঋণ প্রকল্পে প্রাপ্তির তালিকায় অনেক পিছনে পশ্চিমবঙ্গ।

করোনার জেরে আর্থিক কোমর ভেঙেছে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প। চাকরি হারিয়েছেন বহু মানুষ। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য তিন লক্ষ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্প তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। স্লোগান তুলেছিলেন ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার। প্রকল্পটি চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাতে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদির ঘোষণা। ঋণ দেওয়ার হার সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক নির্বিশেষে মোটেও আশানুরূপ নয়। দেশে ছোট শিল্পে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে বাংলা। কর্মসংস্থানের নিরিখেও ভালো অবস্থানে রাজ্য। অথচ, কেন্দ্রের ঘোষিত প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার পশ্চিমবঙ্গ। ছোট শিল্পকে ‘ভাতে মারা’র এই চেষ্টাকে ভালো চোখে দেখছে না শিল্পমহল।

তিন লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পটির নাম ‘ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারেন্টি স্কিম’। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের তরফে ছোট শিল্পকে ঋণ দেওয়ার কথা সর্বোচ্চ বার্ষিক ৯.২৫ শতাংশ হারে। তবে, ব্যাঙ্ক নয়, এমন প্রতিষ্ঠানে সুদের হার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। ব্যবসার চলতি মূলধন জোগাতে ওই ঋণ দেওয়ার কথা জানায় কেন্দ্র। ঋণের আসল অঙ্কের উপর মোরাটোরিয়াম বা ঋণ শোধ স্থগিত রাখার সুবিধাও ঘোষণা করা হয়। প্রকল্পটি তদারকি করতে একটি ট্রাস্ট গঠন করে সরকার। যারা ঋণের গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ কোনও ছোট শিল্প সংস্থা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে, তার একটা অংশ বহন করবে ওই সংস্থা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে স্কিমটি শেষ হয়ে যাবে। যদি তার আগে তিন লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়, তাহলে তখনই প্রকল্পের মেয়াদ ফুরোবে। সময়সীমা শেষ হতে আর কিছুদিন মাত্র বাকি। কিন্তু এই মুহূর্তে কী অবস্থা প্রকল্পটির?

দেশের একটি নামজাদা ক্রেডিট রেটিং সংস্থার হিসেব বলছে, এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির তরফে দেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি দিয়েছে ৬০ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মিলেছে বাকি ঋণ। আর এই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছনের সারিতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পসংস্থাগুলি। এমনটাই বলছে রেটিং সংস্থার প্রকাশিত তথ্য। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির তরফে এরাজ্যে ঋণ মিলেছে ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। অথচ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, কর্ণাটক বা রাজস্থানের শিল্পসংস্থাগুলি অনেক বেশি টাকার ঋণ পেয়েছে। রাজ্যের শিল্পকর্তারা বলছেন, আনলক পর্ব শুরু হয়েছে। অথচ, আর্থিক সঙ্কটে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না সংস্থাগুলি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ঋণ প্রকল্প বড় সুবিধা করে দিতে পারত। কিন্তু রাজ্য সেই সুযোগ খুব বেশি পেল না বলে মনে করছেন তাঁরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen