অবশেষে মিলছে মুক্তির পথ, নিজস্ব AVS পাচ্ছে বাংলা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি,১১:১২: অবশেষে নিজস্ব অ্যান্টি-ভেনম সিরাম (AVS) পেতে চলেছে বাংলা। বিষ সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই বরাত দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। দু’টি সংস্থাকে সেই বিষ থেকে AVS তৈরির চূড়ান্ত ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ১০ নভেম্বরের মধ্যে সংস্থা দু’টিকে চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করে জমা দিতে বলা হয়েছে। তারপরই AVS তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিষ সংগ্রহের পর সেই বিষ ঘোড়ার শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ঘোড়ার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা থেকে নিয়ম মেনে AVS তৈরি করা হবে। কেবল তরল আকারে নয়, পাউডার হিসাবেও তৈরি হবে অ্যান্টি-ভেনম সিরাম। ফলে দীর্ঘদিন ফ্রিজ ছাড়াও সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে উপকৃত হবেন বাংলার বহু প্রান্তিক এলাকার মানুষ।
তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম ও সংলগ্ন জেলার সাপ থেকে যে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেটিই এ দেশে AVS তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগায় পুণে, মুম্বই, হায়দ্রাবাদ ও কসৌলি ল্যাবগুলি। এভিএস প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও ওই ল্যাবগুলিতে তৈরি অ্যান্টিবডি কাজে লাগিয়ে অ্যান্টি-ভেনাম সেরাম উৎপাদন করে। কিন্তু পূর্ব ভারতের, বিশেষ করে বাংলায় সাপের বিষের মধ্যে থাকা প্রোটিন দক্ষিণ ভারতের ওই একই সাপের বিষের প্রোটিনের থেকে গঠনগতভাবে অনেকটা আলাদা। প্রচলিত এভিএস বাংলার সাপে কামড়ানো রোগীদের শরীরে পুরোপুরি কাজ করছিল না। এবার কাজ করবে বলেই মত চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, তামিলনাড়ুর বিষ থেকে তৈরি এভিএস বাংলার চন্দ্রবোড়ার দংশনে ঠিকমতো কাজ করছিল না। যে রোগীর ১০ ভায়ালে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা, তাকে ৩০ ভায়াল দিয়েও লাভ হচ্ছে না অনেক সময়ে।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারস, স্কেলড ভাইপার, গোখরো, কমন ক্রেট বা কালাচ, এই চার প্রজাতির (বিগ ফোর) সাপের বিষ নিয়ে পলিভালেন্ট এভিএস তৈরি হয়। অর্থাৎ চার প্রজাতির সাপের দংশনে একটাই ওষুধ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ‘স স্কেলড ভাইপার’ও আছে। বাংলায় যার কোনও অস্তিত্ব নেই। শুধু এই সাপের বিষ বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের ডাকা বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে এই সাপের বিষ বাদ দিয়ে মনোক্লেড কোবরা বা কেউটের বিষকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নতুন করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হবে। যা সম্পূর্ণ করতে সাত-আট বছর লেগে যাবে। আরও বিলম্বিত হবে বাংলার নিজস্ব অ্যান্টি-ভেনম সিরাম পাওয়া। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়নি।
দেশে মোট চারটি সংস্থা অ্যান্টি-ভেনম সিরাম তৈরি করে। যার মধ্যে দু’টি সংস্থা রাজ্যের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। প্রতি ১০ মিলির দাম পাউডার এভিএসের ক্ষেত্রে ৬৫০ টাকা ও ইঞ্জেকশনের ক্ষেত্রে ৩৯৯.৬০ টাকা চূড়ান্ত হয়েছে। দশ ভায়ালের প্যাক তৈরি করে রাজ্যের ‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর’কে সরবরাহ করবে দুই বেসরকারি সংস্থা। বাংলার নিজস্ব এভিএসের অভাবে বহু প্রাণহানি ঘটছে। সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। নিজস্ব এভিএস পেলে শাপমুক্তি ঘটবে।