বাংলাদেশে ‘রসাতলে’ সংস্কৃতি! জেমসের কনসার্টে হামলায় গর্জে উঠল বাংলার শিল্পীমহল

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:০০: বদলের বাংলাদেশে এবার বড়সড় আঘাত নেমে এল সংস্কৃতির ওপর। মৌলবাদীদের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যবাহী ছায়ানট, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শয়ে শয়ে বাদ্যযন্ত্র। আর এবার সেই আগুনের আঁচ লাগল খোদ ‘নগর বাউল’-এর গায়ে। শুক্রবার রাতে কনসার্ট চলাকালীন হামলার মুখে পড়তে হল বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী জেমসকে। যে জেমস বাংলাদেশকে (Bangladesh) বিশ্বের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁর অনুষ্ঠানেই চলল কট্টরপন্থীদের ইটবৃষ্টি। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে শেষমেশ মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এই ঘটনায় স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীমহল। প্রশ্ন উঠছে, কনসার্ট বা অনুষ্ঠানে শিল্পীদের হেনস্থা করাই কি এখন একশ্রেণির দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিকদের বিনোদনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে?
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়: জেমসের কনসার্টে (James concert) হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের অন্যতম শিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে যখন ব্যান্ড নিয়ে এত হইচই শুরু হল, সেসময়ে দুই বাংলায় প্রচুর অনুষ্ঠান আমরা করেছি। জেমসের সঙ্গেও বহুবার মঞ্চ ভাগ করেছি। এই ধরণের অনুষ্ঠানে জেমস একজন অপরিহার্য শিল্পী। তাঁর মতো জনপ্রিয়তার গল্প অন্য কোনও ব্যান্ডের শিল্পীকে নিয়ে শোনাই যায় না।” অনিন্দ্য আরও যোগ করেন, “শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ঘটনাটি জেনে আমি আতঙ্কিত। জেমসের মতো সর্বজনগ্রাহ্য শিল্পীকে যদি শুধুমাত্র গান গাইতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তবে সেই অন্যায় আমাদের মতো শিল্পীদের মনেও গভীর আঘাত করে।”
শ্রাবণী সেন: ওপার বাংলায় শিল্পীদের ওপর এই ধারাবাহিক আঘাত ও ‘অপ-সংস্কৃতি’র বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কিত বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রাবণী সেন। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “এই যে ধারা শুরু হয়েছে, তা দেখে আমি খুব ভেঙে পড়েছি। জেমসের মতো প্রথমসারির শিল্পীকে এভাবে আক্রমণ করা খুব অন্যায়। ভবিষ্যতে কীভাবে গানবাজনা করব, সেটাই বুঝতে পারছি না।”
জোজো: ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গায়িকা জোজো-ও। তাঁর কথায়, “আমরা শিল্পীরা মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই সবসময় প্রস্তুত থাকি। কিন্তু মঞ্চে এভাবে আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে হারমোনিয়াম-তবলা ভেঙে দেওয়ার দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। তার ওপর জেমসের এই ঘটনা! ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”
নচিকেতা: অন্যদিকে, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া, “শিল্পীরা বরাবরই সফট টার্গেট। কনসার্টে গিয়ে ঝামেলা করে দুষ্কৃতীরা আসলে নিজেদের পেশিশক্তির প্রদর্শন করতে চায়।”