ফেসবুক কবিদের দৌরাত্মে গতি হারাচ্ছে বাংলা সাহিত্য? প্রশ্ন বিশ্ব কবিতা দিবসে

তবে আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। বিশ্বায়নের হাওয়া একটু দেরি হলেও লেগেছে কবিতার জগতে। তাই ফেসবুকের কবিরাও স্বাগত। তবে পরের রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ ফেসবুকের দৌলতে খুঁজে পাওয়া যাবে কি? সেটাই এখন প্রশ্নের!

March 21, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ফেসবুক সাহিত্যের দৌরাত্মে গতি হারাচ্ছে বাংলা সাহিত্য। পাঠকের স্বাদ যাচ্ছে বদলে, সে নিছক সাহিত্য নির্বাচন করতে পারছে না।

আজ পৃথিবীতে জুড়ে কবিদের সংকট। কাগজের দাম উর্ধ্বমুখী,বাড়ছে কালির দামও। ফলত আরও মহার্ঘ্য হচ্ছে কবিতার বই।

অনেকের মাথা কাজ করছে না, লেখার পরিভাষায় যাকে ‘writing block’ বলা হয়। শিবরাম চক্রবর্তীর মতো মানুষের অভাব, যাঁরা বাড়ির দেওয়ালে অন্তত লিখতে পারতেন। বাকি রইল সোশ্যাল মিডিয়া, অর্থাৎ ফেসবুক।

কবিতা আর বিরিয়ানি খাওয়া কি এক! যে চার বন্ধুকে ট্যাগ করে আপলোড করে দেওয়া যায়? সদ্য কলকাতা বইমেলা শেষ হল। অনেকেই কবিতার বই কিনলেন। কেউ কেউ দুই বাংলার কবিদের সই সংগ্রহ করলেন, ছবিও তুললেন।

তারপর ঝটপট স্ট্যাটাস দেওয়ার ধুম পড়ল আর বইগুলো বলে রাখা রইল ভীষণ বৃষ্টির দিনে কিংবা মান অভিমানের পালায় আবার ডাক পড়বে তাদের! কিন্তু কবিতা কি ফেসবুকের পাতায় চলতে পারে না?

স্মার্টফোন যুগের অনেক কবিই মোবাইলে কবিতা লেখেন। শখের কবিদের বাদ দিলে বেশিরভাগই বাংলা হরফে বাংলা কবিতা লেখেন। পাঠক হয়েও সেই হিসাবে অসুবিধা নেই। দিনের শেষে নিজের মতো করে কবিতা পাঠ শেষ কথা। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। ফেসবুকের সভাকবিরা অনেকেই টুকলি করেন স্কুলের পরীক্ষার মতো। তাই কেউ যদি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছো?’র জায়গায় লেখা ‘নলিনী বাড়ি আছো?’

তবে এরকমও নয় যে তথাকথিত অনামী কবিদের কবিতা থেকে একটু বেশি অনুপ্রাণিত হওয়া চলে। তবে আজকের পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু অনেক কবির জন্ম দিয়েছে। হয়ত তিনি কোনও ইঞ্জিনিয়ার বা পাঁচতারা হোটেলের শেফ, যাঁর পক্ষে পেন-পেন্সিল নিয়ে কবিতা লিখতে বসা বাহুল্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্য পেশার মানুষদের কবিতায় অন্তর্ভুক্তিকরণ সম্ভব হয়েছে অনেকটাই ফেসবুকের কল্যাণে।

কেবল ফেসবুক নয়, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা হোয়াটসঅ্যাপ, সর্বত্র এখন সুযোগ রয়েছে আরও বেশি কিছু মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার।যাঁরা বাংলা নিয়ে বা ভাষা নিয়ে চর্চা করেন কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে, তাঁদের অনেকেই ওয়াকিবহাল ছন্দের বিভেদ নিয়ে। কিন্তু আজকের ফেসবুকের সভাকবিরা কি সনেট সম্পর্কে জানেন না, সবটাই ছন্দহীনতার একটি অনন্য বিশ্লেষণ? আঁকার ক্ষেত্রেও একসময় দেখা যেত, যা কিছু আঁচড় পড়ছে সাদা পাতায়, সবটাই ওই অ্যাবসট্র্যাক্ট আর্ট এর উচ্চাঙ্গের শ্রেণিতে দলভুক্ত করার। কবিতা লেখা সহজ হয়েছে না কবি হওয়া সহজ হয়েছে? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়া।

ফেসবুকে কবিতা চুরি কি আটকানো অসম্ভব?
অনেক সিরিয়াস কবি শুরুতে কবিতা পোস্ট করতেন ফেসবুকেই। কখনও লাইভে আসতেন বা স্বরচিত কবিতার মিশেলে ভিডিও বানাতেন। কিন্তু দেখা দিয়েছে, কবিতা চুরি আটকানো যায়নি। উল্টে দেখা গিয়েছে, যেই ব্যক্তি চুরি করলেন কবিতা, তিনিই লাইক, শেয়ার, কমেন্টের পসরা নিয়ে খাতিমান হয়ে গেলেন। এই লজ্জা আরও বড় লজ্জা কবিতাকুলের জন্য!

তবে আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। বিশ্বায়নের হাওয়া একটু দেরি হলেও লেগেছে কবিতার জগতে। তাই ফেসবুকের কবিরাও স্বাগত। তবে পরের রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ ফেসবুকের দৌলতে খুঁজে পাওয়া যাবে কি? সেটাই এখন প্রশ্নের! এই ফেসবুকের সাহিত্য চর্চাতেই গতি হারাচ্ছে বাংলা সাহিত্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen