বর্জ্যতাপ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন বাঙালি গবেষক

জেনারেটর থেকে শুরু করে ইঞ্জিন, ব্রয়লার বা ফার্নেস চললে তাপ উৎপন্ন হবেই। সেই তাপ কোনও কাজে লাগে না। তাই সেটি বর্জ্য হিসেবে গণ্য হয়

August 15, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত রিপোর্টে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বেশ ভীতিপ্রদ তথ্য মিলেছে। উষ্ণায়নে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মনুষ্যসৃষ্ট তাপ, যার সিংহভাগই উৎপন্ন হয় শিল্প থেকে। শিল্পবর্জ্য হিসেবে তাপ খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তবে, সেটা পরিবেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এই বর্জ্যতাপ (waste heat) থেকেই সুলভে বিদ্যুৎ তৈরির হদিশ দিয়েছেন বারাকপুরের ছেলে প্রীতম সাধুখাঁ (Pritam Sadhukhan)। জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটেরিয়াল সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে এই অসাধ্য সাধন করেছেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের এই কৃতী। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান প্রকাশনা সংস্থা নেচারের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণাপত্র।

জেনারেটর থেকে শুরু করে ইঞ্জিন, ব্রয়লার বা ফার্নেস চললে তাপ উৎপন্ন হবেই। সেই তাপ কোনও কাজে লাগে না। তাই সেটি বর্জ্য হিসেবে গণ্য হয়। শিল্প সংস্থাগুলি তো বটেই, পরিবেশের পক্ষেও এই তাপ মাথাব্যথার কারণ। এতদিন পর্যন্ত এই তাপকে পুনর্ব্যবহারের কোনও বিকল্প জানা ছিল না। সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি তাত্ত্বিকভাবে জানা থাকলেও তা বাণিজ্যিক উৎপাদনের উপযোগী ছিল না। এই জায়গাতেই সাফল্য প্রীতমদের। কোবাল্ট এবং লোহার সঙ্গে কিছু জৈব যৌগ মিশিয়ে পাইরো ইলেকট্রিক ক্রিস্টাল বা কেলাস বানিয়েছেন তাঁরা। সেটাকে জুড়ে দিয়েছেন একটি সার্কিটের সঙ্গে। এতে ব্যবহার হয়েছে ন্যানোপ্রযুক্তি। তার নাম দেওয়া হয়েছে পাইরো-ইলেকট্রিক ন্যানোজেনারেটর। পাইরো ইলেকট্রিসিটি হল তাপশক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরের ঘটনা। কণাগুলির ফেরোইলেকট্রিসিটি ধর্ম বা তাপপ্রবাহে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে ইলেকট্রনের প্রবাহিত হওয়ার ধর্মকে এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এই প্রযুক্তির সাহায্যে বর্জ্য তাপ থেকে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। প্রীতম বলেন, প্রয়োজনে বাল্বের পরিবর্তে ব্যাটারি রেখে দিলে সেটাও চার্জ দেওয়া যাবে। যন্ত্রটির পেটেন্ট নেওয়ার পথে এগচ্ছেন প্রীতমরা।

এই প্রযুক্তির আরও একটি দিক হল মিনিয়েচারাইজেশন। এই বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, আধ মিলিমিটার দৈর্ঘের (একটি চালের দানার ভগ্নাংশ মাত্র) একটি কেলাসও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। ঘরের সাধারণ তাপমাত্রাতেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে এই কেলাসের মাধ্যমে। এই পর্যায়ের কার্যকারিতার জন্য নেচারের মতো প্রকাশনা সংস্থা নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে গবেষণাপত্রটি ছেপেছে। কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও এক গবেষক এবং অধ্যাপক এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তবে, এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, চিনের ইয়াংঝৌ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার গবেষকরা এতে সাহায্য করলেও এটা প্রীতমেরই পিএইচডি পেপার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen