ওড়িশায় ফের বাঙালি শ্রমিকের উপর হামলা, লোহার রডে পিটিয়ে পা ভাঙল দুষ্কৃতীরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:০০: পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে গিয়ে আবারও আক্রান্ত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। ওড়িশার সম্বলপুরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) জুয়েল শেখের। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল আর এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। জুয়েলের মৃত্যুর দিনই সামান্য সময়ের ব্যবধানে এবং অনতিদূরে আক্রান্ত হন আশিক মহম্মদ (Ashiq Mohammad) নামের আরেক যুবক। অভিযোগ, ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। শনিবার ভাঙা পা ও সারা শরীরে কালশিটে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন আতঙ্কিত আশিক।
পরিবারকে ফিরে পেয়ে আশিকের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে হচ্ছে, স্বপ্ন দেখছি না তো!’’ ভেবেছিলেন আর হয়তো চেনা মুখগুলো দেখা হবে না। গত বুধবার ওড়িশার সম্বলপুরের শান্তিনগর থানা এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। আশিক জানান, সেদিন রাত ৮টা নাগাদ তিনি এবং তাঁর ন’জন সঙ্গী সবজি কিনতে বেরিয়েছিলেন। জুয়েলের ভাড়াবাড়ি থেকে আশিকদের থাকার জায়গা মেরেকেটে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ। রাস্তায় হঠাৎ তিনটি বাইকে করে ছয়জন দুষ্কৃতী তাঁদের ঘিরে ধরে। দুষ্কৃতীদের মুখ মাস্কে ঢাকা ছিল এবং কপালে ছিল তিলক।
আশিকের বয়ান অনুযায়ী, পথ আটকে প্রথমেই তাঁদের কাছে আধার কার্ড দেখতে চাওয়া হয়। পরিচয়পত্র দেখানোর আগেই দুষ্কৃতীরা বলতে শুরু করে, ‘‘এরা তো বাংলাদেশি। মার এদের।’’ আচমকা আক্রমণে আশিকের সঙ্গীরা প্রাণভয়ে পালালেও, তিনি পালাননি। আশিক বলেন, ‘‘ভয় পেলেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমরা কেউ বাংলাদেশের বাসিন্দা নই। অবৈধভাবে ঢুকিওনি।’’ কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। অভিযোগ, এক দুষ্কৃতী তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য জোর করতে থাকে। আশিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘আমি মুসলিম ঘরের ছেলে, আমি জয় শ্রীরাম বলতে পারব না।’’
এই কথা শোনার পরেই শুরু হয় পৈশাচিক অত্যাচার। আশিক পকেট থেকে আধার কার্ড বের করে দেখানোর চেষ্টা করলেও আক্রমণকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আশিক বলেন, ‘‘ওরা নিজেদের মধ্যে ওড়িয়া ভাষায় কথা বলছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম। ওরা বলাবলি করছিল- ‘একটু আগে তো মুর্শিদাবাদেরই একজনকে (জুয়েল) মেরে এসেছি। এটাকেও মার’।’’ এরপর চড়-থাপ্পড় ছাড়িয়ে এক দুষ্কৃতী লোহার রড বের করে তাঁকে মারতে শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পর সঙ্গীরা তাঁকে উদ্ধার করেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মারধরের জেরে আশিকের তিনটি হাড় ভেঙেছে। শনিবার বাড়ি ফিরেও আতঙ্ক কাটছে না তাঁর। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে পারলেও আর কখনও ওড়িশায় ফিরবেন না। সরকারের কাছে তাঁর বিনীত আর্জি, ‘‘এ রাজ্যেই যেন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মতো কাজ পাই। বাংলাদেশি অপবাদ নিয়ে আর কোথাও যেন মার খেতে না হয়।’’
অন্যদিকে, জুয়েল শেখের মৃত্যুর ঘটনায় মুর্শিদাবাদের সুতি থানায় একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের (West Bengal Police) একটি বিশেষ দল প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় রওনা দিয়েছে।