চলছে প্রথম রাজ্যব্যাপী পাখি সুমারি, সুন্দরবনে পাওয়া গেলো বিলুপ্তপ্রায় পাখির নয়া ‘কলোনি’
বর্তমানে গোটা বিশ্বেই অস্বাভাবিক হারে কমেছে তাদের সংখ্যা।

গোটা বিশ্বেই তাদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কয়েক বছর আগেও ‘বিলুপ্তপ্রায়’ পাখির তালিকায় তাদের নাম ছিল না। কিন্তু, বর্তমানে গোটা বিশ্বেই অস্বাভাবিক হারে কমেছে তাদের সংখ্যা। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে তাদের ডানা মেলে ওড়ার দৃশ্য দেখা গেলেও, পশ্চিমবঙ্গের কোথাও তারা সেভাবে দাপাদাপি করেনি। বলা ভালো, দাপাদাপি করলেও তা নজরে আসেনি কারওর। প্রকৃতিপ্রেমীদের কথায়, শীতের সময় পরিযায়ী পাখি হিসেবে এদের আগমন ঘটে ঠিকই, তবে সেই সংখ্যা নেহাতই কম। এবছর উলটপুরাণ। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত জম্বুদ্বীপে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ‘গ্রেট নট’ নামক এই বিলুপ্তপ্রায় পাখির সন্ধান পেয়েছেন সমীক্ষক দলের সদস্যরা।
এই প্রথম বনদপ্তরের উদ্যোগে গোটা রাজ্যে বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি সুমারি হচ্ছে। এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে রাজ্যের কিছু জলাশয়ে পাখি সুমারির কাজ হতো। রাজ্য বনদপ্তরের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বিনোদ কুমার যাদব বলেন, এবছরই প্রথম গোটা রাজ্যে সম্মিলিতভাবে এই সুমারির কাজ হল। গত ১২ জানুয়ারি থেকে সুমারির কাজ চলেছে। বনদপ্তরের আধিকারিক, কর্মীরা ছাড়াও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কয়েকজন পক্ষীবিশারদ এই কাজে যুক্ত ছিলেন। বনদপ্তর সূত্রের দাবি, এবছর পাখি সুমারির কাজে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় ৮০০ জন। প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বলেন, চলতি মাসেই এই সংক্রান্ত রিপোর্ট তাঁরা প্রকাশ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বনদপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, অধিকাংশ জায়গাতেই পাখি সুমারির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ডিভিশনে জমা পড়েছে। দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জায়গায় এখন দ্বিতীয় দফায় সুমারির কাজ চলছে। প্রতিটি ডিভিশনে রিপোর্ট জমা পড়লে তা বিকাশ ভবনে পাঠানো হবে। সেখানে বনদপ্তরের আধিকারিকরা সব রিপোর্টকে এক জায়গায় এনে বিশ্লেষণ করবেন। তারপর চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। দক্ষিণবঙ্গে সুমারির কাজে নিযুক্ত প্রকৃতি সংসদের সদস্য অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, প্রতিটি জায়গাতেই বেশ ভালোভাবে পাখি সুমারির কাজ শেষ হয়েছে। সুন্দরবনে একসঙ্গে তিন হাজারের বেশি ‘গ্রেট নট’ দেখা যাওয়ায়, তাঁরা খুব খুশি। বাটান প্রজাতির এই পাখিটির বিচরণ ক্ষেত্র সাইবেরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গোলিয়ার উপরের দিকে এবং রাশিয়ার কিছু অংশে এরা প্রজনন করে। বর্তমানে এই প্রজাতির পাখির সংখ্যা গোটা বিশ্বেই হ্রাস পেয়েছে। সুন্দরবনে এর আগে কোনও এক বছরে এই পাখি দেখা গিয়েছিল বলে রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু, একসঙ্গে এতগুলি পাখি এই প্রথম দেখা গেল। এতে যারপরনাই খুশি পক্ষীপ্রেমী থেকে বনদপ্তরের কর্তারা।
এছাড়াও অন্যান্য পরিযায়ী পাখির সঙ্গে গ্রে প্লোভার, পালাসেস গাল (গ্রেট ব্ল্যাক হেডেড গাল) এবং কাস্পিয়ান টার্নের মতো বেশ কিছু পাখি এবার ভালো সংখ্যায় দেখা যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন পক্ষীপ্রেমীরা। উল্লেখ্য, ব্ল্যাক নেকড্ গ্রেব নামের এক পরিযায়ী পাখিকে এবছরই প্রথম সুন্দরবনে দেখা গিয়েছে। প্রতিবছর এই পাখিকে উত্তরবঙ্গে দেখা গেলেও, দক্ষিণবঙ্গে একে দেখতে পাওয়ার রেকর্ড নেই। গত বছর মুর্শিদাবাদে এই প্রজাতির পাখি একবার দেখা গিয়েছিল। অসমর্থিত সূত্রের দাবি, বর্ধমানের পূর্বস্থলীর চুপির চরে বহু বছর আগে একবার এই পাখিকে দেখা গিয়েছিল। এবার সুন্দরবনে এই পাখির দর্শন পাওয়ায় খুশি প্রকৃতিপ্রেমীরা।