সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর সুযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোয়া বারো বিজেপির?

যদিও তদন্তের ক্ষেত্রে তাতে কোন লাভ হয়নি। কিন্তু বিহারের সহানুভূতির ভোট পেতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি

June 14, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

আজ থেকে ঠিক একবছর আগে আজকের দিনেই মুম্বইয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল এক উঠতি অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ। মুম্বই পুলিশের তদন্তে উঠে আসে আত্মহত্যার তত্ত্ব। এইমস-এর মেডিক্যাল বোর্ডও সেই দাবিতে সিলমোহর দেয়। এমনকি তার ব্যক্তিগত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, মেন্টাল ডিপ্রেশন এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেনএই অভিনেতা। হ্যাঁ, আমরা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের কথাই বলছি।

কিন্তু এই আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে নারাজ ছিল একদল সাইবার যোদ্ধা। এরা নিজেদের ‘SSRian’ বলে দাবি করেন। তারা সোজাসোজি খুনের তত্ত্ব খাড়া করেন। ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেন চলতে থাকে। বলিউড ইন্ডাস্ট্রি থেকে অ-বিজেপি নেতা – কেউই বাদ যায় না তাঁদের সন্দেহভাজন খুনিদের তালিকা থেকে। বলিউডের নেপোটিজম নিয়ে সরব হন তাঁরা। মুম্বই পুলিশকেও তীব্ৰ আক্রমণ শানাতে পিছপা হয়না এই দল। এদের অনেকেরই বক্তব্য, এক ছোট শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের গুণী, দেশপ্রেমী অভিনেতাকে ষড়যন্ত্র করে ওপরে উঠতে দেওয়া হয়নি। মহারাষ্ট্র পুলিশের তথ্য অনুযায়ী সামাজিক মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য প্রায় দেড় লক্ষ ভুয়ো হ্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল টুইটারে।

৩৩ বছর বয়সী সুশান্ত খুব অল্প সময়েই ভারতীয় সিনেমা জগতে কাজের মাধ্যমে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন। কাই পো ছে, সোনচিড়িয়া, ছিঁছোড়ের মতো সিনেমা ছিল তাঁর ঝুলিতে। তিনি জীবিত অবস্থায় যত না মানুষের প্ৰিয় ছিলেন, মৃত্যুর পর যেন সকলের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন। ‘SSRian’ রা তাঁর মৃত্যুর পর থেকে গত এক বছর ধরে টুইটের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। গত মাসে উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস-ও তাদের রোষানলে পড়েছিলেন। কারণ উইকিপিডিয়াতে সুশান্তের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা লেখা হয়েছে। জিমি ওয়েলস তাদের সাথে কথা বলতে চাইলেও তারা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ট্যাগ করতে থাকে এই বাহিনী।

এইসবের মধ্যে এই মৃত্যুকে কাজে লাগিয়ে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছিল বিজেপি। কারণ অভিনেতার মৃত্যুর চার মাস পরেই ছিল বিহার বিধানসভার নির্বাচন। সুশান্ত সিংহ রাজপুত ছিলেন পাটনার ছেলে। বিহারে বিজেপি এবং জনতা দল একসাথে ভোট লড়েছিল। আর এই ঘটনায় অনেকটাই ফায়দা তুলেছে তারা। এমনকি বিহার থেকে তদন্তের জন্যে বিশেষ অফিসারও মুম্বইতে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তদন্তের ক্ষেত্রে তাতে কোন লাভ হয়নি। কিন্তু বিহারের সহানুভূতির ভোট পেতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি (BJP)।

মিশিগানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। সেই গবেষণা বলছে, বিজেপির নেতারাই মূলত এই মৃত্যুটিকে খুন হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই মৃত্যুর তদন্তে সিবিআই, ইডি এবং এনসিবিকে বহাল করে। এনসিবি সুশান্তের বাড়ি থেকে ৫৯ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। সেই সাথে সুশান্ত ঘনিষ্ট দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে একজন সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। তদন্তে দাবি করা হয় মাদক চক্রের সাথে তাঁর যোগ আছে এবং তিনিই সুশান্তকে গাঁজা সরবরাহ করতেন। যদিও, মার্চ মাসে এনসিবি এই মাদক কাণ্ডে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। ‘SSRian’ দের দ্বারা অভিযুক্ত কোন অভিনেতা বা নেতাদের নামই নেই সেই চার্জশিটে।

অবশেষে গত বছর নভেম্বরে মহারাষ্ট্র পুলিশের তদন্তে প্রকাশ পে অন্য একটি তথ্য। জানা যায়, প্রায় দেড় লক্ষ টুইটার হ্যান্ডেলের মাধ্যমে মহারাষ্ট্র পুলিশের নামে কুৎসা রটানো হয়েছে। এর বেশিরভাগই গত বছর জুন মাসের পর তৈরি করা হয়েছে। মূলত এই হ্যান্ডেলগুলির মাধ্যমেই কুৎসা রটানো হত। ফলে, সুশান্তের মৃত্যু আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সামাজিক মাধ্যমকে কীভাবে ফায়দার জন্য ব্যবহার করে বিজেপি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen