হিমাচলপ্রদেশের পরাজয় মেনে নিতে পারছে না বিজেপি, নাড্ডাকে নিয়ে দলের অন্দরে বাড়ছে ক্ষোভ
হিমাচলে কেবল বিজেপি’র পরাজয় হয়নি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও মুখ পুড়েছে।

গুজরাত নির্বাচনে গেরুয়া ঝড় আরও তীব্র হলেও হিমাচলপ্রদেশে এবং দিল্লি পুরনিগমের নির্বাচনে মুখ পুড়েছে পদ্ম শিবিরের। যা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরমহলে।
গুজরাতে ২৭ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও দল যখন অভাবনীয় বিপুল জয় পেয়েছে, সেখানে হিমাচলপ্রদেশে মাত্র পাঁচ বছর পর ক্ষমতা হাত ছাড়া হওয়ার কারণ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে দলে। বিজেপি সূত্রের খবর, হিমাচলে হারের কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে আঙুল উঠেছে দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডার দিকে।
অন্যদিকে দেড়দশক পর বিজেপি’র হাতছাড়া হয়েছে দিল্লি পুরনিগম। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর পরাজয়ের দায় নিয়ে দিল্লির রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে আদেশ গুপ্তকে। রাজধানীর পুরনিগম ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলেও ‘বলির পাঠা’ করা হল দলের রাজ্য সভাপতিকে।
আর এতেই আঘুনে ঘি পড়েছে। ফল বেরনোর চারদিন পর আদেশ গুপ্তকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলেও হিমাচলের পরাজয় নিয়ে এখনও চুপ কেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের রাজ্য বলেই কি এখনই কোনও রকম কড়া পদক্ষেপ করতে সাত-পাঁচ ভাবছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব?
অথচ হিমাচলে কেবল বিজেপি’র পরাজয় হয়নি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও মুখ পুড়েছে। কারণ, দলের বিক্ষুব্ধদের নিয়ে যখন জেরবার বিজেপি, তখন প্রধানমন্ত্রী জনসভা থেকে বলেন, প্রার্থী কে ভুলে যান। আমার মুখ দেখে পদ্মে ছাপ দিন। ডবল ইঞ্জিনের সরকার টিকে গেলে আপনাদের লাভ হবে।
কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা গেল, পাহাড়ি রাজ্যটির মানুষ সে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কথায় সাড়া দেয়নি! বিজেপির অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অনেক রাজ্যেই ভোটে হেরেছে বিজেপি। কিন্তু হিমাচলের মতো কোথাও প্রধানমন্ত্রীকে নিজের কথা বলে ভোট চাইতে হয়নি। আর তা করে মুখ পুড়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
বিজেপি সূত্রে খবর, হিমাচলের বাসিন্দা এবং ওই রাজ্য তাঁর রাজনীতির কর্মভূমি হওয়ার সুবাদে নাড্ডা নিজেই পাহাড়ি রাজ্যটির ভোটের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, রাজ্য সরকারের কাজকর্মও তিনিই পর্যালোচনা করতেন।
গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা শুধু মুখ্যমন্ত্রী বদলাননি, পুরনো মন্ত্রীদেরও বদলে দিয়ে নতুন মুখ এনেছেন। ফলে সরকারি কাজে গতি এসেছে। হিমাচলে নাড্ডার পরামর্শে মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হলেও তাঁর কথাতেই আগের মন্ত্রীদের বেশিরভাগকেই রেখে দেওয়া হয়।
অথচ, রাজ্য সরকারের কাজকর্মে যে অসন্তোষ বাড়ছে তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত বছর তিনটি বিধানসভা এবং একটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে।
পাশাপাশি গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেও বিপাকে পড়তে হয় দলকে। ৬৮ আসনের বিধানসভায় ২২টিতে বিজেপি’কে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। এরই সঙ্গে কংগ্রেস উপযুক্ত ইস্যু তুলে ধরে বাজিমাৎ করেছে। পুরনো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর প্রতিশ্রুতি, অগ্নিপথ স্কিমের নেতিবাচক দিক এবং মহিলাদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণাকে নির্বাচনের প্রচারে তুলে ধরে কংগ্রেস।
ফলে জেপি নাড্ডাকে নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপি’র অন্দরে। দলের একাংশের মতে আদেশ গুপ্তাকে সরে যেতে বলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেই কারণেই বুধবার ফল বেরোনোর চারদিন পর হারের দায় নিয়ে দিল্লির রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়েন আদেশ। তাহলে হিমাচল নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় নিয়ে যদি সবচাইতে বেশি দায় কারওর উপর বর্তায় তাহলে তিনি হলেন নাড্ডা। নৈতিক কারণে তাঁর উচিত হিমাচলের পরাজয়ের দায় নিয়ে পদত্যাগ করা।