নির্বাচনের মুখে বিক্ষোভে বিক্ষোভে জেরবার গুজরাত বিজেপি, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন মোদী

গুজরাত নিয়ে চাপে বিজেপি? হ্যাঁ, এরকমই একটা জল্পনা চলছে রাজনৈতিকমহলে

September 24, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

গুজরাত নিয়ে চাপে বিজেপি? হ্যাঁ, এরকমই একটা জল্পনা চলছে রাজনৈতিকমহলে। আগামী ডিসেম্বরে গুজরাত বিধানসভার নির্বাচন। এবার গুজরাত নিয়ে বেশ চাপে আছে বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, এমনিতেই দীর্ঘদিন রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার পলে বিজেপি সরকার বিরোধী একটা হাওয়া তৈরি হয়েছে। তার উপর বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকারের উপর মানুষের কিছু ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আবার পঞ্জাব দখলের পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ গুজরাতে আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে। গুজরাতে আপ এবার ভাল ফল করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কংগ্রেসও অতীতের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

ফলে স্বস্তিতে নেই গেরুয়া শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্যের শাসক দলের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে একের পর এক বিক্ষোভ। আসন্ন নির্বাচনে ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়লে গদি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। এমনই আশঙ্কায় ভুগছে বিজেপি। এই পরিস্থিতির কথা পৌঁছেছে মোদীর কানেও। সম্প্রতি গান্ধীনগরে দলের সদর দপ্তরে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেখানে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভে রাশ টানার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরই পাঁচ মন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। লক্ষ্য ছিল, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। কিন্তু, মাসান্তে দেখা যাচ্ছে তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিলে সিংহভাগ আন্দোলনই অব্যাহত আছে। কোথাও কোথাও ঝাঁঝ আরও বেড়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে নানান দাবিতে আলাদা আলাদাভাবে পথে নেমেছেন শিক্ষক, সরকারি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, কৃষক, চাকরিরত অবস্থায় প্রয়াত সরকারি কর্মীদের সন্তান, মিড ডে মিল কর্মী, সচিবালয়ের ক্লারিক্যাল স্টাফদের একাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর আমেদাবাদকে কেন্দ্র করে ১৭টির বেশি বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন কৃষক সংগঠন পথে নেমেছে বিদ্যুতের অভিন্ন ট্যারিফ, কেন্দ্রের ভারতমালা প্রকল্পের বিরোধিতার মতো একাধিক বিষয় নিয়ে। পাশাপাশি, পুরনো পেনশন প্রকল্প সহ একগুচ্ছ দাবিতে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছিলেন সরকারি কর্মচারিদের একাংশ। দাবি আদায় না হলে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। শুধু সরকারি কর্মীই নয়, শাসক শিবিরের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া করেছে চৌধুরী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ।

গুজরাত নিয়ে বিজেপি কতটা চাপে আছে তা সাম্প্রতিক একটা ঘটনা থেকে বোঝা যায়। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে গুজরাত সরকার জানিয়েছে, রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজেন্দ্র ত্রিবেদী এবং পূর্ণেশ মোদীর দায়িত্ব কমানো হল। এরা দু’জনই একইসঙ্গে একাধিক মন্ত্রক সামলাচ্ছিলেন। রাজেন্দ্র ত্রিবেদীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে রাজস্ব দপ্তর। সড়ক ও নির্মাণ দপ্তরের মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন পূর্ণেশ মোদী। তবে রাজেন্দ্র ত্রিবেদী আগের মতোই আইন, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং পরিষদীয় মন্ত্রিত্ব সামলাবেন। পূর্ণেশ মোদীর হাতেও থাকবে পরিবহণ, তীর্থক্ষেত্র, পর্যটন এবং বিমান পরিবহণ দপ্তর। এক বছরের মধ্যে ফের মন্ত্রিসভায় রদবদল করে বিজেপি। শোনা যাচ্ছে যে মন্ত্রীদের দায়িত্ব কমানো হল, তাঁদের দপ্তরের পারফরম্যান্সে খুশি ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল। তাই নির্বাচনের আগে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি।

রাজনৈতিক মহলের মতে গুজরাটে এবার খুব চাপে আছে বিজেপি। এখান তারা তাদের বহু ব্যবহরিত ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলতে চাইছে। তাই গোধরার উপসংশোধনাগার থেকে বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে ১৫ আগস্ট মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার। জেল থেকে বেরনোর পরেই এগারোজন দোষীকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সামনেই গুজরাত বিধানসভার ভোট। তার আগে ২০০২-এর ‘বীর’দের পুনর্বাসন দিয়ে মেরুকরণের তাস খেলে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে চাইছে বিজেপি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen