‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জিতলে বাঙালিত্ব ধ্বংস করে দেবে’ বিস্ফোরক মন্তব্য আরএসএস এর প্রাক্তন সংগঠকের
একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্ক থেকে এই বার্তাই দিলেন এবিভিপির প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক।
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জিতলে বাঙালিত্ব ধ্বংস করে দেবে। এমনটাই মন্তব্য করলেন আরএসএস (RSS) এর প্রাক্তন সংগঠক ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্ক থেকে এই বার্তাই দিলেন এবিভিপির প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক।
ওনার স্পষ্ট বার্তা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের রাজনীতির সবচাইতে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এরা ফ্যাসিস্ট। ১৯২৫ সালে, এদের যে সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সম্পূর্ণ সৃষ্টির ইতিহাসটা যদি ভালো করে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে এরা একেবারে মুসোলিনি, হিটলার, নাৎসি এবং ফ্যাসিস্টদের আদলে একেবারে সংগঠনটাকে গড়ে তুলেছিল। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, তাদের প্রার্থনা, তাদের নিয়মানুবর্তিতা, তাদের এক দেশ – এক নেতা – এক ভাষা – এক ধর্ম, সমস্ত কিছু একেবারে ফ্যাসিস্টদের অনুকরণে গড়ে উঠেছিল। এবং সময়টাও ছিল একেবারে ১৯২৫, বুঝতেই পারছেন। তারপরে গোলওয়ালকারের ‘We or Our Nationhood Defined’ তাতে একেবারে স্পষ্ট ভাবে হিটলারের নাৎসিদের, ফ্যাসিস্টদের উপাসনা করা আছে, প্রশস্তি বারবার বারবার করেছে। এটা হচ্ছে একটা মারাত্মক ক্ষতিকর জিনিস।
তাঁর দাবি, ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। বাকস্বাধীনতাতে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক দেশে, আমাদের ভারতের মতো একটা দেশে, যেখানে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-বৈষ্ণব-শাক্ত-আস্তিক-নাস্তিক, নানা শ্রেণির মানুষ, নানা ধর্মের মানুষ, নানা ভাষাভাষী, তাদের মধ্যে এই একটা ফ্যাসিস্ট সংগঠন একেবারেই যাকে বলে সম্পূর্ণ আউট অফ সিঙ্ক। তাদের নারীবিদ্বেষ, মেয়েদের সেকেন্ড ক্লাস, থার্ড ক্লাস সিটিজেন হিসেবে দেখা… ভয়ঙ্কর পিতৃতান্ত্রিক, ফিউডাল একটা অর্গানাইজেশন।
তিনি আরও বলেন, আরএসএস হচ্ছে আসল, তার রাজনৈতিক ফ্রন্ট হচ্ছে বিজেপি; যেটা আগে জনসঙ্ঘ ছিল, শ্যামাপ্রসাদ তৈরি করেছিলেন, তারও আগে তৈরি হয়েছে এবিভিপি বা বিদ্যার্থী পরিষদ, তারপরে হয়েছে জনসঙ্ঘ। সুতরাং, এবিভিপি কিন্তু বিজেপি (BJP) বা জনসঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন নয়, আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন। তারপরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এগুলো হচ্ছে সব সিস্টার অর্গানাইজেশন। আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ থেকে তৈরি হয়েছে বজরং দল, মেয়েদের সশস্ত্র দুর্গা বাহিনী। তারপর বজরং দল, আরও হাজার মাশরুম অর্গানাইজেশন তৈরি হয়েছে। এরা সকলেই বিজেপি-এর সঙ্গে যুক্ত এবং পেছনে আসল ড্রাইভিং ফোর্স হচ্ছে নাগপুর থেকে, হেডকোয়ার্টার থেকে সমস্ত ইন্সট্রাকশন দেওয়া আরএসএস।

ওনার সতর্কবার্তা, বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) জেতে, তাহলে সবচাইতে যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিটা হবে, তা হল, আমাদের বাঙালিত্ব ওরা চিরকালের মতো ধ্বংস করে দেবে। আমাদের বাঙালির যে নবজাগরণ হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ, রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, কেশব চন্দ্র সেন, এই মহামণীষীদের যে ক্ষমতা আমরা দেখেছি, আবার পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়ের মত মানুষদের আমরা তারই আলটিমেট প্রোডাক্ট হিসেবে দেখেছি। এঁরা একটা উদারনৈতিক চেতনা আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দিয়ে গেছেন, প্রগতিশীল জীবনযাত্রা, আধুনিক জীবনযাত্রা, নারীস্বাধীনতা, জাত-পাত নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাই না।
তাঁর ভয়, আমাদের ভাষার প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা, আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি-সাহিত্য-শিল্প ওরা একেবারে ধ্বংস করে দেবে। কারণ ওরা জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেবে। আজ পশ্চিমবঙ্গে যেটা দেখা যাচ্ছে যে বড় বড় শহরগুলোতে সমস্ত বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে সব হিন্দি মিডিয়াম, ইংরেজি মিডিয়াম, একেবারে চরম আকার ধারণ করবে। বাঙালি জাতি হিসেবে যে জাতিসত্তা, সেই জাতিসত্তাকে ওরা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে চুরমার করে দেবে। বাঙালিকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের একটা ক্ষুদ্র কলোনি হিসেবে গড়ে তুলবে। যেখানে বাঙালিরা দাসের মত, তারা ওই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের দাসের মত ভূমিকা পালন করবে।
বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, যেসব প্রতিশ্রুতি ওরা দিচ্ছে, সেগুলো একেবারে ঠুনকো, এগুলোর কোনো অর্থই হয় না। একদিন বলছে পঁচাত্তর লাখ চাকরি তৈরি হবে, তারপরের দিন ওয়েবসাইট থেকে সেটা তুলে নিচ্ছে। আর দুর্নীতির বন্যা বয়ে যাবে। এতদিন পশ্চিমবঙ্গের ভেতরে ওদের তুলনায় চুনোপুঁটিরা দুর্নীতি করেছে। এখন ওদের বাইরে থেকে বিশাল পরিমাণ কালো টাকা, পশ্চিমবঙ্গকে ছেয়ে ফেলবে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির আর সম্মান নিয়ে বাঁচার আর কোনো জায়গা থাকবে না। রবীন্দ্রনাথকে একেবারে একটা গৌণ একটা চেহারা দেবে। জাতীয় সঙ্গীত বদল করে ফেলার কথা ওরা অনেকবার বলেছে, রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে অনেক জায়গাতে, তার জায়গায় নাথুরাম গডসের স্ট্যাচু হবে।
আজ আসাম, ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায়, পশ্চিমবঙ্গে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশকে একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলবে সব দিক থেকে। অর্থনৈতিক দিক থেকে, সাংস্কৃতিক দিক থেকে, বাঙালি জাতির জাতিসত্তা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে সবচাইতে বড় বিপদের কারণ।
তথ্য ঋণ: গুরুচণ্ডালী ওয়েবসাইট