বীরাঙ্গনা ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল – আজাদ হিন্দ বাহিনীর মহিলা মুখ

শেষ জীবনে সিপিআই(এম)-এ যোগদান করেন এবং রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন।


July 23, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অন্যতম সশস্ত্র বিপ্লবী। আজাদ হিন্দ বাহিনীর মহিলা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু প্রথম জীবনটি তাঁর একদম অন্যরকম ছিল। চল্লিশের দশকে লক্ষী সেহগাল তখন তৎকালীন স্বামীর সাথে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। সেখানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেই সময় কর্মরত ছিলেন তিনি। যুক্ত ছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগের সাথে।

১৯৪৩-এ নেতাজি সিঙ্গাপুরে গেলেন।  ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগের সভাপতি ইয়েলাপ্পা তাঁকে ডেকে বললেন, নেতাজি ডেকে পাঠিয়েছেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী গঠনের ভার দিতে চান। ৯ জুলাই এক বিশাল সমাবেশে ‘টোটাল মোবিলাইজেশন’-এর ডাক দিয়েছেন নেতাজি। তার তিন দিন পরে গঠিত হল নারী বাহিনী। ইতিহাসের পাতায় যা ঝাঁসি বাহিনী নামে পরিচিত। নেতাজি দেখতে আসবেন খবর পেয়ে জনা কুড়ি মেয়েকে তিন দিন ধরে গার্ড অব অনার দেওয়ার তালিম দিলেন লক্ষ্মী সেহগাল। শাড়ির আঁচল কোমরে জড়ানো, হাতে ভারী রাইফেল, মেয়েরা দিলেন গার্ড অব অনার।    

নেতাজি এতো কম সময়ে এই প্রচেষ্টায় খুশি হয়েছিলেন। লক্ষ্মীকে তিনি বলেছিলেন, সব দিক ভেবে কাজ শুরু করতে। বলেছিলেন এটা কিন্তু লোক দেখানো ব্যাপার নয়, বর্মার জঙ্গলে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জিজ্ঞেস করেছিলেন কবে থেকে কাজ শুরু করতে পারবে? প্রশ্নের সাথে সাথে জবাব, আগামিকাল থেকে।  

কথামতোই শুরু হল কাজ। নেতাজি নিজের মুখে কিছু না বললেও, ঝাঁসি বাহিনীর বীরাঙ্গনারা নিজেদের চুল বিসর্জন দিলেন। প্রাণ দেওয়ার জন্য যারা তৈরি ছিল, তাদের কাছে চুল ছিল নিতান্ত ক্ষুদ্র বিষয়। দীর্ঘ কেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে আহুতি হল। ইউনিফর্ম হল জোধপুর ব্রিচেস, বুশ শার্ট, কালো বকলস দেওয়া জুতো। শুরু হল মিলিটারি ট্রেনিং। 

জাপানি সংস্কৃতিতে মেয়েরা গৃহিণী অথবা মনোরঞ্জনকারিণী। প্রথম দিকে মেয়েদের ট্রেনিংয়ের গুলিবারুদ জোগান দিতে আপত্তি ছিল জাপানিদের। পরে অবশ্য মেয়েদের সাহস ও আন্তরিকতায় জাপানি অফিসারেরা মুগ্ধ হন। ১৯৪৩ সালে জাপান সেনা বাহিনীর সাথে ঝাঁসি বাহিনী সহ সমগ্র আজাদহিন্দ বাহিনী বার্মার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, যদিও ১৯৪৪ এ তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। 

তার এক বছর পর ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন। এক বছর বার্মার কারাগারে আটক ছিলেন তিনি। দিল্লীতে আইএনএ সদস্যদের বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি অবিভক্ত ভারতে ফিরে আসেন। শেষ জীবনে সিপিআই(এম)-এ যোগদান করেন এবং রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen