CAA-র সময়সীমা বাড়ানো: নাগরিকত্ব নাকি ভোটের অঙ্কে ঘুঁটি সাজাচ্ছে কেন্দ্র?

২০১৯ সালে আইন পাশ হলেও তার বিধি তৈরিতে লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। অথচ সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে আচমকা, কোনও সংসদীয় বিতর্ক বা পরামর্শ ছাড়াই।

September 3, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৪১: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে মোদী সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের মতে ২০১৪ সালের সীমা সরিয়ে ২০২৪ পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশের পশ্চিমবঙ্গ, অসমসহ একাধিক রাজ্যে ভোটের প্রস্তুতি তুঙ্গে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে – এটা কি নিছক মানবিক সিদ্ধান্ত, নাকি ভোটব্যাঙ্কের অঙ্কে সাজানো এক পরিকল্পিত চাল?

পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও, মুসলিম শরণার্থীদের বাদ রাখা হয়েছে শুরু থেকেই। এই বিভাজনমূলক নীতির মধ্যেই এবার সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ পর্যন্ত করা হয়েছে – যা কার্যত ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনী মরসুমে নতুন ভোটার তৈরির সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে বড়সড় পরিবর্তন আনল কেন্দ্র। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জারি হওয়া নতুন গেজেট বিজ্ঞপ্তি. যেখানে সময়সীমা দশ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নির্দেশিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতেন।

আইন অনুযায়ী, আবেদনকারীকে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ভারতে অন্তত এক বছর বসবাস করতে হবে, এবং গত ১৪ বছরে কমপক্ষে পাঁচ বছর ভারতে থাকার প্রমাণ দিতে হবে। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্য – অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম – এই আইনের আওতা থেকে আংশিকভাবে ছাড় পেয়েছে।

এদিকে বিহারে চলছে নিবিড় ভোটার সমীক্ষা (SIR)। বিরোধীদের অভিযোগ, এই সমীক্ষার আড়ালে বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঠিক এই সময়েই CAA-র সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ – এই সিদ্ধান্ত কি ভোটার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া?

২০১৯ সালে আইন পাশ হলেও তার বিধি তৈরিতে লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। অথচ সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে আচমকা, কোনও সংসদীয় বিতর্ক বা পরামর্শ ছাড়াই। এমনকি বিজেপির অন্দরেও রয়েছে দ্বিধা- এই পরিবর্তনের জন্য নতুন বিল প্রয়োজন কি না, তা নিয়েও মতবিভেদ স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, বিদেশি নাগরিক সংশোধনী আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়েছে – অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য তৈরি করতে হবে ডিটেনশন ক্যাম্প। যতদিন না তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই শেষ হয় বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়, ততদিন এই ক্যাম্পেই আটকে রাখা হবে। বাজেট অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল পাশ হওয়ার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জারি হয়েছে নির্দেশিকা।

প্রতিটি রাজ্যকে অন্তত একটি করে ডিটেনশন শিবির গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অসম, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়েছে। রাজ্যের মতে, এই ক্যাম্পের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়াবে।

এই আইনের বাস্তবায়ন ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে – বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী, বিশেষত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা, কি আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়তে চলেছেন? পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব প্রমাণ, এবং ভাষাগত বিভ্রান্তি – সব মিলিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

তাই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, CAA-র সময়সীমা বাড়িয়ে কেন্দ্র যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে- একদিকে মানবিকতার মুখোশ, অন্যদিকে ভোটের অঙ্কে সুবিধা। বিরোধীদের অভিযোগ, এটা আসলে নাগরিকত্বের নামে নির্বাচনী ঘুঁটি সাজানো।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen