সিএএ বিজেপির ‘নির্বাচনী ললিপপ’, ফাঁদে পা দেবেন না-বার্তা আসামের ভুক্তভোগী বাঙালিদের

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামের ভুক্তভোগী বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন এ রাজ্যের বাঙালিদের সতর্ক করেছে, সিএএ নিয়ে বিজেপি বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

December 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

দেখতে দেখতে বছর ঘুরেছে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (‌CAA)‌‌ ‌বলবত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিনিয়ম এখনও প্রণয়ন করেনি কেন্দ্রের মোদী সরকার। অথচ আসামের পর এবার বাংলায় ‌সিএএ-কে ভোটের হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya) মতুয়া ভোট টানার লক্ষ্যে ঘোষণা করেছেন, আগামী জানুয়ারি থেকেই বাংলায় সিএএ চালু করে মতুয়াদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামের ভুক্তভোগী বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন এ রাজ্যের বাঙালিদের সতর্ক করেছে, সিএএ নিয়ে বিজেপি বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

প্রসঙ্গত, সিএএ নিয়ে মতুয়াদের মন জয়ে বাংলার বিজেপি (BJP) নেতারা প্রচারে নামলেও আসামের বিজেপি কিন্তু বেশ সতর্ক। বরাকের হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে সিএএ নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করলেও অসমিয়া-অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ভোটের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত বছর এই সময় বিভিন্ন অসমিয়া সংগঠনের সিএএ–বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ততই বিজেপিও যেমন সিএএ নিয়ে পিছিয়েছে, তেমনই উত্তাল আন্দোলনও থিতিয়ে গিয়েছে। আগামী ভোটে আসামে বিজেপি সিএএ নিয়ে নীরব থাকারই পক্ষে।

এদিকে, বাংলায় সিএএ-কে তারা অন্যতম প্রধান হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে বলেই মনে করেন আসামের ভুক্তভোগী বাঙালিরা। বিশেষ করে প্রায় দেড় কোটি মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখেই বাংলায় বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি (‌সিএএ)‌–কে খুঁচিয়ে তুলবে। কারণ এই বিরাট সংখ্যক মতুয়ারা রাজ্যের, বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ার সিংহভাগ আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন। ওপার বাংলা থেকে আসা এই মানুষরা বছরের পর বছর লোকসভা থেকে বিধানসভা, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় ভোট দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাগ্য নির্ধারণ করলেও তাঁরা একটা কাগজ চান। বিজেপি সেই সুযোগটাই নিতে চাইছে। 

আসাম কংগ্রেসের (Congress) মতে, সিএএ আসলে বিজেপির ‘‌নির্বাচনী ললিপপ’‌। বরাকের বাঙালিকে তারা এটা খাইয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কারণ তাতে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমিয়া ভোটে টান পড়বে!‌ আসামের বাঙালিদের বড় অংশ এখন ঠেকে শিখেছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে সিএএ বাতিল করার দাবিতে ১৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীদের অধিকাংশের দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান ভারতের সংবিধানের মূল ভাবধারার বিরোধী। বিতর্ক দেখা দিতে পারে ভেবেই ধীরে চলো নীতি নিয়েছে কেন্দ্র।

গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরির মতে, আইন পাশ হওয়ার ৬ ‌মাসের মধ্যেই বিধিনিয়ম তৈরি করতে হয়। তা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার শুধু সময়ই নিয়ে যাচ্ছে। আসাম নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির সভাপতি তথা বরাকের শিলচর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‌বাঙালির মধ্যে বিভেদ ঘটাতেই এ সব করা হচ্ছে। বাঙালি কখনও হিন্দু বা মুসলিম হয় না। বাঙালি বাঙালিই। মূর্খেরা এই সত্যটা জানে না।’‌ বাংলার মানুষকে তিনি বিজেপির ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ জানান।‌‌

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen