২১ জুলাই নজিরবিহীন ভিড়েও সচল শহর, কলকাতা পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা হাই কোর্টের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:২৬: কলকাতা পুলিশের কড়া নজরদারিতে যানজটমুক্ত রইল কল্লোলিনী তিলোত্তমা। পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করল কলকাতা হাই কোর্ট।
কলকাতা শহর দেখল তৃণমূলের বিশাল শক্তিপ্রদর্শন, আবার সেই সঙ্গেই দেখল এক সুচারু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা। ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ ঘিরে ধর্মতলায় সমবেত হন লক্ষাধিক মানুষ, তাতেও অচল হয়নি শহর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শহরের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখল কলকাতা পুলিশ, যা আদালতের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
২০২৬শের বিধানসভা ভোটের আগে এটাই ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শেষ শহিদ দিবসের সমাবেশ। প্রতিবছরের মতো এ বারও সমাবেশের ভিড় আগের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলেই দাবি করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভাষায়, “এ বছর ২১ জুলাইয়ের ভিড় গত বছরকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। এটিই এই দিনের বৈশিষ্ট্য।”
কলকাতা হাই কোর্ট আগেভাগেই নির্দেশ দিয়েছিল যে, সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে মিছিল শেষ করতে হবে, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে কোনও মিছিল করা চলবে না। সেই অনুযায়ী, শহরে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে সকাল থেকেই সক্রিয় হয় কলকাতা পুলিশ। আদালতের নজর ছিল গোটা ব্যবস্থার উপর। পরে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ভালভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পুলিশ কাজ করেছে।”
নিউ আলিপুর থেকে কলকাতা হাই কোর্টে পৌঁছাতে যে সময় সাধারণত লাগে, সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, এই মন্তব্য আদালতে করেন এক আইনজীবী। বিচারপতিরাও একমত হন যে, শহরের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়নি। ধর্মতলায় সমাবেশ শুরু ও শেষের সময়েও শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে বড়সড় যানজট দেখা যায়নি। সকাল থেকেই মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশবাহিনী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পেছনে তিনটি কারণ ছিল, প্রথমত, মিছিলের কারণে বহু মানুষ এদিন ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেননি। দ্বিতীয়ত, রাস্তায় অ্যাপ ক্যাবের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। তৃতীয়ত, মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক থাকায় অধিকাংশ যাত্রী তা-ই ব্যবহার করেছেন। অফিস টাইমে মেট্রোয় প্রচণ্ড ভিড় হলেও সেখানেই ভরসা পেয়েছেন যাত্রীরা।
ধর্মতলার সমাবেশস্থলে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে বিশাল মিছিল আসে। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার দিক থেকেও বহু মানুষ যোগ দেন। সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে গার্ডরেল বসিয়ে একাধিক রাস্তা আটকে দিয়েছিল পুলিশ। বিকল্প পথে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে প্রধান রাস্তাগুলিতে তেমন কোনও মিছিল দেখা যায়নি, যা আদালতের নির্দেশ পালনে পুলিশের কৌশলগত সাফল্য। তাই, এবারের ২১শে জুলাই ছিল একদিকে রাজনৈতিক শক্তিপ্রদর্শন, অন্যদিকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার মেলবন্ধন। কলকাতা পুলিশ প্রমাণ করল, প্রয়োজন হলে শহর সচল রাখা তাদের পক্ষেও সম্ভব। আর সেই ব্যবস্থার স্বীকৃতি মিলল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারালয় থেকে।