গল্ফগ্রিনে উদ্ধার হওয়া মহিলার কাটা মুণ্ডুর রহস্যের সমাধান করল ক্যাম্ফার

গ্রাহাম রোডের কালীমন্দিরের দিকে দৌড় শুরু করল সে। ময়লার স্তূপে নাক নেড়ে চেড়ে মিলল না কিছুই।

December 14, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
গল্ফগ্রিনে উদ্ধার হওয়া মহিলার কাটা মুণ্ডুর রহস্যের সমাধান করল ক্যাম্ফার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: খবরটা যখন আসে, তখন সকাল প্রায় পৌনে ৯টা। গিয়ে দেখি, জঞ্জালের স্তূপের মধ্যে একটি সাদা প্লাস্টিকের মোড়ক ঘিরে ভিড় করে রয়েছেন লোকজন। প্লাস্টিকে এক মহিলার কাটা মুণ্ড! কানে সোনার দুল। চাপ চাপ টাটকা রক্ত। টালিগঞ্জের গ্রাহাম রোড। মহিলার কাটা মুণ্ডু উদ্ধারের রহস্য ‘গন্ধ’ পেয়েই ঘটনাস্থলে ডাক পড়ল ক্যাম্ফারের।

অভিজ্ঞতায় ভরপুর লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দা-কুকুর, স্নিফার ডগ। ঘ্রাণশক্তিই তার মেধা। পূর্ণবয়স্ক ল্যাব্রাডর, পুলিসি নাম ক্যাম্ফার হলেও, আদরের ডাক নামটা কিন্তু ‘রাজা’। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সকাল ১১টা বেজে ২০ মিনিট। ডেপুটি কমিশনারের (এসএসডি) ডাকে সাড়া দিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্যমোচনে হাজির রাজা।

দীর্ঘদিনের ট্রেনিং প্রাপ্ত ক্যাম্ফার পথে নামতেই তটস্থ থানার সব আধিকারিকরা। ডগ স্কোয়াডের আধিকারিকদের ঘটনার যাবতীয় বিবরণ দিলেন ডিসি বিদিশা কলিতা। তা বুঝে নিয়ে ক্যাম্ফারকে নিয়ে একেবারে অকুস্থলে নেমে পড়লেন ডগ স্কোয়াডের এক আধিকারিক। তাঁর ‘সিট’ কমান্ডে সুবোধ বালকের মতো আস্তাকুঁড়ের পাশে বসে পড়ল ক্যাম্ফার। একেবারে শান্ত। কোনও ছটফটানি নেই। ততক্ষণে মনিব তার প্রিয় ক্যাম্ফারকে কানে কানে কিছু একটা বলে দিলেন। এরপরেই হাতের সাহায্যে গোয়েন্দা কুকুরের চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলেন ডগ স্কোয়াডের আধিকারিক। যাতে কোনওভাবে সে যেন জিভ না বের করে ফেলে। যে বস্তার ভিতর থেকে কাটা মুণ্ডুটি উদ্ধার হয়, তাতে লেগে মহিলার রক্ত। প্রায় ৫-৬ সেকেন্ড ধরে সেই রক্তের ঘ্রাণ শুঁকল ক্যাম্ফার।

প্রাথমিক কাজ সম্পূর্ণ করেই একলাফে দাঁড়িয়ে পড়ল গোয়েন্দা কুকুর। মৃতের পরিচয়? আততায়ীর পরিচয়? কোন পথে দেহ লোপট? একাধিক প্রশ্নের উত্তর আশায় ক্যাম্ফারের পায়ের দিকেই তখন নজর সব পুলিসের।

গ্রাহাম রোডের কালীমন্দিরের দিকে দৌড় শুরু করল সে। ময়লার স্তূপে নাক নেড়ে চেড়ে মিলল না কিছুই। কালীমন্দিরের রাস্তা ধরেই আততায়ী এসেছে বলে বুঝতে পারে পুলিস। এরপরেই ফাঁকা রাস্তা পেয়ে হু-হু করে ছুটছে ক্যাম্ফার। হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট ছাড়াতে তাকে অনুসরণই একমাত্র পথ। গ্রাহাম রোড, আজাদগড়ের সমস্ত বাসিন্দারা তো কার্যত হতবাক। এমন দৃশ্য তাঁদের চোখে প্রথম। গোয়েন্দা কুকুরের পিছনের প্রায় জনা ৪০ পুলিস। প্রত্যেকেই কাজ থামিয়ে সেই দৃশ্য দেখতে বেরিয়ে এসেছেন রাস্তায়। গোটা প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ডিং করলেন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। চিহ্নিত করা হল ক্যাম্ফারের দেখানো পথে থাকা সমস্ত সিসি ক্যামেরা।

এরপরেই ঘটনাস্থল প্রায় ৬০০ মিটার দূরে আধারশিলা অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে ঢুকে যায় ক্যাম্ফার। হতবাক হয়ে যায় অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তারক্ষীরাও। সেখানকার পার্কিং লটে গিয়ে আবর্জনার একটি স্তূপে আটকে যায় ক্যাম্ফার। সেখানেই পুলিসের সন্দেহ ওই আবর্জনা স্তূপে মহিলার রক্তের গন্ধ পেয়েছে দুঁদে গোয়েন্দা-কুকুর। তাহলে কি এই ৬০০ মিটার রাস্তা ধরেই গিয়েছিল আততায়ী? মহিলা রক্ত তাজা থাকার জেরে পুলিসের অনুমান বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাটি ঘটেছে। ক্যাম্ফারের দেখানো রাস্তায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে পুলিস।

রাতে পুলিশ জানতে পারে, নিহত ওই মহিলার নাম খাদিজা বিবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের মুড়াগাছা কালীতলা পারুল গ্রামের বাসিন্দা। বিয়ে হয়েছিল মগরাহাটের রাধানগর গ্রামে। পরিচারিকার কাজ করতেন। আতিকুর লস্কর নামে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের জেরেই মহিলাকে খুন করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল আতিকুরকে শুক্রবাত গভীর রাতে আটক করে। রাত পর্যন্ত জেরা চলে আতিকুরের।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen