মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক ব্যবহারে আপ্লুত সিবিআই অফিসাররা
মুখ্যমন্ত্রী আসার সঙ্গে মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তাঁর আন্তরিকতা কখনও ভোলার নয়।

নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন সিবিআই’র অফিসাররা। কেউ কেউ একটু অস্বস্তিও বোধ করছিলেন। কিন্তু দু’-চার কথা বলতেই সেই অস্বস্তি ধুয়েমুছে সাফ। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে রীতিমতো আপ্লুত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। এমনকী সিবিআইয়ের এক শীর্ষকর্তাকে যাওয়ার সময় দিদি সুলভ ভঙ্গিতে বলে যান— ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই কোভিড পরিস্থিতিতে পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখবেন। যা শুনে ওই কর্তা প্রথমে একটু আশ্চর্য হন। কিন্তু সেকেন্ডের ব্যবধানে তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে ঘাড় নাড়েন। বিনিময় হয় সৌজন্য। কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কতটা মানবিক এবং সেই সঙ্গে শুভাকাঙ্ক্ষীও। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে কোনও রাজনীতি দেখতে পাননি সিবিআইয়ের অফিসাররা। বরং তাঁদের বক্তব্য, তিনি প্রকৃত একজন ‘ওয়েল উইশার’। সেভাবেই আমাদের পরামর্শ দিয়ে গেলেন। সেই সঙ্গে এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানুষ হিসেবে তিনি কতটা বড় হৃদয়ের।
সোমবার শাসকদলের দুই মন্ত্রী সহ চারজনকে সাতসকালে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে সিবিআই। বেলা ১০টা ৫০মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং হাজির হন নিজাম প্যালেসে। এসেই সোজা উঠে যান ১৪ তলায় সিবিআইয়ের দপ্তরে। মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেন এমন আঁচ করে আগেভাগেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। তাঁকে এসপি’র চেম্বারে বসানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তখন উপরে উঠে গিয়েছেন অনেকেই। ১৪ তলায় তাঁকে দেখে সিবিআই অফিসারদের অনেকেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। শুরুতেই দলের চার নেতার গ্রেপ্তারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুরুতে তাঁর গলার স্বর ছিল একটু চড়া। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সংযমী মানসিকতা দেখান তিনি। এরপর ঠান্ডা মাথায় দু’-চার কথা বলেন তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে। কেন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হল, তা জানতে চান। সিবিআইয়ের তরফে এক শীর্ষকর্তাই মূলত তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। হার্দিক পরিবেশে চলে কথোপকথন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিটি কথাতেই ছিল আন্তরিকতার ছাপ। যা দেখে রীতিমতো মুগ্ধ তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। একজন মুখ্যমন্ত্রী যে এত সাধারণ ও সহজ সরল হতে পারেন, তা অফিসারদের অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না।
সিবিআই দপ্তরে এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা। তাঁর ব্যবহারে পঞ্চমুখ সকলে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তিনি যে কত বড় হিউম্যান বিইং, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি পদক্ষেপে। সিবিআই অফিসারদের বক্তব্য, মামলা চলবে আইন অনুযায়ী। মুখ্যমন্ত্রী আসার সঙ্গে মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তাঁর আন্তরিকতা কখনও ভোলার নয়। মনে থাকবে অনেকদিন।