মোদির শপিং প্যাকেজের প্যাঁচে কেন্দ্রীয় কর্মীরা
সোমবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করলেন তৃতীয়টি। নামে প্যাকেজ হলেও এই প্রথম সরকারি কোনও উপহারে রাজকোষ থেকে কোনও অর্থব্যয় হবে না। অভিনবত্ব এটাই!

মহামারীর ধাক্কায় চোখে অন্ধকার দেখছে অর্থনীতি। আবার উৎসবের মরসুমও সমাগত। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য মোদি সরকারের উপহার, অভিনব শপিং প্যাকেজ! ‘ফেস্টিভ্যাল অফার’। সুতরাং শর্তাবলি প্রযোজ্য। আর যত প্যাঁচ ওই শর্তাবলিতেই। করোনা ও লকডাউনের আবহে এর আগে দু’টি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সোমবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করলেন তৃতীয়টি। নামে প্যাকেজ হলেও এই প্রথম সরকারি কোনও উপহারে রাজকোষ থেকে কোনও অর্থব্যয় হবে না। অভিনবত্ব এটাই!
কেন্দ্রীয় কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকার উৎসব-অগ্রিম। যা ১০ মাস ধরে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, সরকারের প্রদান করা টাকা আবার কোষাগারে ফিরে আসবে। মাত্র ১০ মাসেই। তবে অগ্রিম এই অর্থপ্রাপ্তির স্বাদ পাওয়া যাবে শুধুমাত্র কেনাকাটা করলে। কারণ, টাকা ব্যাঙ্কেও ট্রান্সফার করা হবে না। হাতেও মিলবে না। বিলি করা হবে স্পেশাল রুপে কার্ড। যেখানে আগেভাগেই থাকবে ১০ হাজার টাকার ‘টপ-আপ’। ব্যাঙ্কে অথবা এটিএমে যে কার্ড চলবেই না। ফলে টাকা হাতে পাওয়ার প্রশ্ন নেই। একমাত্র জিনিসপত্র কিনলে ওই কার্ড দিয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট করা যাবে। চলতি অর্থবর্ষের শেষদিন, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ মধ্যরাতেই ব্লক হয়ে যাবে ওই কার্ড। কিন্তু কেউ যদি সম্পূর্ণ ১০ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করতে না চান? কোনও সমস্যা নেই। যত টাকার জিনিসপত্র কিনবেন, সেই টাকাই পরিশোধ করতে হবে।
প্যাকেজের দ্বিতীয় পর্ব আরও চিত্তাকর্ষক। কেন্দ্রীয় কর্মীরা ভ্রমণভাতা (এলটিসি) হিসেবে যে টাকা পাওয়ার অধিকারী, এবার বেড়াতে না গেলেও মিলবে সেই অর্থ। সরকার চাইছে, বিমান ও ট্রেনের টিকিটের বদলে ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে ওই ভাতা ব্যয় করুন কর্মীরা। যেকোনও জিনিস কিনলেই হবে? না। নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, বেছে বেছে সেইসব পণ্য কিনতে হবে, যাদের জিএসটি ১২ শতাংশের বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্মীদের প্রাপ্য টাকাটুকুই ব্যয় করলে হবে না। এই সুবিধা পেতে খরচ করতে হবে এলটিসি বাবদ প্রাপ্য ভাতার তিনগুণ। বাকি টাকা নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে কর্মীদের।
এই প্যাকেজের আড়ালে দেখা যাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ। সরকারের এই সিদ্ধান্তে করোনা ও লকডাউনের জেরে মুখ থুবড়ে পড়া পর্যটন ও হোটেল শিল্প নতুন করে ফের ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই নিজেদের ৪৯ লক্ষ কর্মীকে পর্যটনের পরিবর্তে পরোক্ষে কেনাকাটায় উৎসাহ প্যাকেজ দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণার পরই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হোটেল ও পর্যটনের সর্বভারতীয় সংগঠনগুলি।
কিন্তু হঠাৎ এরকম বিস্ময়কর প্যাকেজ কেন? প্রথমত, সরকার চাইছে মহামারী-বিধ্বস্ত বাজারে টাকা আসুক। কেনাকাটার মাধ্যমে বাজারে যত টাকা আসবে, ততই বাড়বে জিএসটি কালেকশন। ততই সরকারের রাজকোষ পূর্ণ হবে। থমকে যাওয়া শিল্পবাণিজ্য ও ব্যবসায়ীদের জীবিকাও ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিই হল বাজার। আর্থিক লেনদেন যত বেশি হবে, ততই চাঙ্গা হয় বাজার অর্থনীতি। নির্মলা সীতারামন এদিন নিজেই বলেছেন, লকডাউনের পর কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঞ্চয় অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন দরকার ক্রয় করা। তাই তাদের বাজারমুখী করার লক্ষ্যেই এই প্যাকেজ। ক্রয়বিক্রয়ের বাজার চাঙ্গা হলে আশার আলো দেখাবে অর্থনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র, জিডিপি! যা এখন তলানিতে! এই প্যাকেজে কেন্দ্রীয় কর্মীরা সাড়া দেবে তো? সরকারের টেনশন সেটাই!