রাজ্যের ৫০০০ কোটি জিএসটি বকেয়া নিয়ে চুপ কেন্দ্র

রাজ্য সরকারকে তার নিজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করেই করোনা মোকাবিলায় জোর দিতে হয়েছে।

May 15, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জিএসটি বাবদ রাজ্যের বকেয়া রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ গত আড়াই মাসে এক টাকাও আসেনি রাজ্যে। উত্তর আসেনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে লেখা অমিত মিত্রর চিঠিরও। সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে হুঁশিয়ার করে ডঃ অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘গত সাত মাস জিএসটি কাউন্সিলের একটিও বৈঠক হয়নি। ফলে রাজ্যগুলি তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারছে না।’ অথচ জিএসটি কার্যকর হওয়ার আগে নিয়ম করা হয়েছিল, রাজ্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেবে কেন্দ্রই। কিন্তু সেই কথা রাখছে না নরেন্দ্র মোদি সরকার। নিয়মিত ক্ষতিপূরণের টাকা আসছে না। শুধু বাংলা নয়, অন্যান্য রাজ্যের বকেয়ার তালিকায় রীতিমতো দীর্ঘ। সেই বকেয়ার পরিমাণ মেলালে হয় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। 


এরপরও নিরুত্তর মোদি সরকার। অথচ, মহামারীর এই কঠিন সময়েই সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। কোভিডের আঘাতে সংক্রমণ বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মৃত্যুও। রাজ্যের চিত্রটাও প্রায় একই। আট দফা ভোটের পর থেকেই করোনা চেপে বসেছে বাংলার উপর। কোভিড হাসপাতাল তৈরি, অক্সিজেন প্লান্ট, রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা মেটানো… সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতেই বিপুল খরচ বেড়েছে রাজ্য সরকারের। এই পরিস্থিতিতে জিএসটি বাবদ প্রাপ্য টাকা এসে পৌঁছনোর নামগন্ধ নেই। রাজ্য সরকারকে তার নিজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করেই করোনা মোকাবিলায় জোর দিতে হয়েছে। 

জিএসটি থেকে রাজ্যের মাসে আয় হয় গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আয়ের উৎস বলতে এক্সাইজ। আর থাকল অনলাইনে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশন। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে ফের আঘাত হেনেছে। দোকানপাটও খোলা থাকছে সীমিত সময়ের জন্য। ফলে জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও বিক্রি সেই অর্থে নেই। উপরন্তু সংক্রমণে লাগাম পরানোর উদ্দেশ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে লোকাল ট্রেন। সব মিলিয়ে বিক্রিবাটাও নেই। আয়ের উৎস মার খাচ্ছে প্রায় সর্বত্রই। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশনও উল্লেখযোগ্য নয়। স্বাভাবিকভাবে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য অর্থদপ্তরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ভোট এবং করোনার জন্য জিএসটি থেকে আয় স্বাভাবিক কারণেই কমেছে। জিএসটি খাতে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জিএসটি খাতে এসেছিল যথাক্রমে ৬০০ ও ৮০০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৪০০ কোটি। সেই শেষ। ফেব্রুয়ারির পর রাজ্য আর টাকা পায়নি।


অথচ, কেন্দ্রীয় সরকারের তাপ-উত্তাপ নেই। জিএসটি কাউন্সিলের শেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছর অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ। ভারতের সংবিধানের ২৭৯এ ধারা অনুযায়ী জিএসটি কাউন্সিল গঠন হয়। এই কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা তিন মাস অন্তর, বছরে চারবার। ডঃ অমিত মিত্র চিঠিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেই বৈঠক কেন্দ্র এড়িয়ে যেতে পারে না। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে যেন নিয়মিত বৈঠক ডাকা হয়। অন্যথায় রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে আস্থার ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই অক্টোবরের মতো ভার্চুয়াল বৈঠকের ব্যবস্থা হলেও চলবে। সেখানে রাজ্যের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। রাজ্য যে ফেব্রুয়ারির পর আর কোনও টাকা পায়নি, সেই প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রকে চাপ দেওয়া যাবে। কিন্তু মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য নেই বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen