লাদাখ সীমান্ত থেকে আপাতত সরলো চীন, কাটছে জট
গলওয়ান নদীর বাঁকে চিনা সেনার তৈরি বেশ কয়েকটি ছাউনি ইতিমধ্যেই ভেসে গিয়েছে
টানটান স্নায়ু যুদ্ধে আপাত ইতি।
১৫ জুন ইন্দো-চিনের রক্তক্ষয়ী সেনা সংঘর্ষের তিন সপ্তাহ পর অবশেষে লাদাখের তিন জায়গা থেকে সরতে শুরু করেছে চিনা সেনা। দু’তরফে সেনা এবং কূটনীতিক স্তরে লাগাতার আলোচনার পর চিনের এ দিনের গতিবিধিকে পিছু হঠার ইঙ্গিত বলেই মনে করছে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, সোমবার গলওয়ান সংলগ্ন প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে প্রায় দু’কিমি পিছু হটেছে চিনা সেনা। গলওয়ান ও শায়ক নদীর মোহনায় ওয়াই নালার কাছে, ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর থেকে অস্থায়ী সেনা ছাউনি সরিয়ে ফেলেছে চিন। গলওয়ানের ভারতীয় ভূখণ্ডে আর চিনা সেনার উপস্থিতি নেই। ভারতীয় সেনাও ফিরে এসেছে পূর্ব অবস্থানে, আর দু’দেশের মধ্যেকার প্রায় ৮০০ মিটার অংশ চিহ্নিত হয়েছে ‘বাফার জোন’ হিসেবে। অর্থাৎ সেখানে কোনও দেশের সেনাই আপাতত টহল দিতে পারবে না।
চিনা সেনার এই পিছু হঠার ক্ষেত্রে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ওয়াইয়ের রবিবারের দীর্ঘ দু’ঘণ্টার ফোনালাপ। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, ইন্দো-চিন সীমান্তের পশ্চিম অংশে অশান্তি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত ও খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। আর তাতে যত দ্রুত সম্ভব ডিসএনগেজমেন্ট (সেনা প্রত্যাহার) করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে দু’পক্ষই। বৈঠকে দু’টি বিষয় স্থির হয়েছে—প্রথমত, ঐকমত্যের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা, দ্বিতীয়ত, মতপার্থক্যকে বিতর্কে পরিণত না হতে দেওয়া। চিনের বিদেশ মন্ত্রকও বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ডিসএনগেজমেন্ট প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা প্রয়োজন।

কিন্তু তিন বারের সেনা পর্যায়ের বৈঠক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আচমকা লাদাখ সফরে চিনকে হুঁশিয়ারি— এ সবের পরও চিনা সেনা নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি। সেখানে দোভালের সঙ্গে দু’ঘণ্টার আলোচনায় কী এমন ঘটল, যে তড়িঘড়ি সেনা সরাতে রাজি হয়ে গেল চিন? এখানেই উঠে আসছে অন্য একটি দৃষ্টিকোণ। সূত্রের খবর, তাপমাত্রার কারণে হিমবাহ গলে গলওয়ান নদীতে জলস্তর আচমকাই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে, ফলে গলওয়ান নদীর বাঁকে চিনা সেনার তৈরি বেশ কয়েকটি ছাউনি ইতিমধ্যেই ভেসে গিয়েছে।