‘আমার কাছে সংবিধানই সর্বোচ্চ, সংসদ নয়’, নতুন বিতর্কের শুরু প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যগুলিতে আরএসএস এবং বিজেপি সরকার সংবিধানকে অনেক অপমান করেছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:০৭: ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই (Chief Justice of India BR Gavai) বলেছেন যে ভারতের সংবিধানই সর্বোচ্চ (Constitution is supreme) এবং গণতন্ত্রের তিনটি শাখাই এর আওতায় কাজ করে। তাঁর নিজের শহর (home town) মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় একথাবলেন প্রধান বিচারপতি।
কী বলেছেন বিচারপতি:
“আজকাল একটা চর্চা শুনছি, গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে কোনটা সর্বোত্তম। অনেকে বলেন, সংসদই সর্বোত্তম। কিন্তু আমার মনে হয় সংবিধানই সর্বোত্তম? কারণ গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভই কাজ করে সংবিধানের অধীনে। সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারে ঠিকই কিন্তু এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে পারে না।। বিচারপতিরাও ইচ্ছামতো রায় দিতে বা ইচ্ছামতো যা খুশি বলে দিতে পারেন না। আমাদের প্রত্যেককে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকেই কাজ করতে হয়।” গত মাসে ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন বিচারপতি গাভাই।
গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, সংবিধানের ৩৯বি ধারা মতে জনস্বার্থ কিংবা সাধারণ মানুষের মঙ্গলের কারণে যে কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার। নির্দেশিকা জারি করে শীর্ষ আদালত বলেছে যে, সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা উচিত, ১৫ দিনের নোটিস দেওয়া আবশ্যক। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের সপক্ষে তিনি বলেন, সব মানুষের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার সবার আগে।
উল্লেখ্য,ক’দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এছাড়া বারবারই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়কে বেশ কিছু মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এসবের পর প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য সেইসব উত্থাপিত প্রসঙ্গের জবাব বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সম্প্রতি মে মাসে উপরাষ্ট্রপতি সরাসরি বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ না করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সংসদকে ‘সর্বোচ্চ’ এবং সংসদ সদস্যদের সংবিধানের ‘ultimate masters’ বলে অভিহিত করেন। এদের ওপর আর অন্য কারও কোন অথরিটি থাকতে পারে না বলেই তিনি ঘোষণা করেন। তাঁর কথায়, নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংবিধানের চূড়ান্ত কর্তা, তাদের ওপরে আর কেউ নেই।
গত বছর মে মাসে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহা বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট ক্ষমতায় ফিরে এলে আবারও উচ্চ বিচার বিভাগে বিচারক নিয়োগের “অগণতান্ত্রিক” কলেজিয়াম ব্যবস্থা অপসারণের চেষ্টা করবে। কলেজিয়াম ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি রয়েছে, দলিত, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী এমনকি উচ্চ বর্ণের দরিদ্রদের জন্য উচ্চ বিচার বিভাগে বিচারকের পদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে কলেজিয়াম, যা অগণতান্ত্রিক।”
বিজেপি সরকারের সংবিধানকে উপেক্ষা করার এই বিষয় নতুন নয়। বিজেপি আসার অনেক আগে, প্রায় চার দশক আগে, সংঘ পরিবার সংবিধানের প্রতি তাদের অস্বস্তি অনেকবার প্রকাশ করেছে। বাস্তবে, আরএসএসের অনেক সঙ্ঘচালক সংবিধান বাতিলের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থানও নিয়েছিলেন। এমনকি তারা ভারতীয় নারীদের উন্নয়নের জন্য নেহেরু সরকারের প্রথম বিপ্লবী আইনেরও বিরোধিতা করেছিলেন।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যগুলিতে আরএসএস এবং বিজেপি সরকার সংবিধানকে অনেক অপমান করেছে। কিন্তু কোন সংবাদমাধ্যম তাদের এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না, মূলধারার মিডিয়া এই ধরণের অনেক ঘটনা রিপোর্ট পর্যন্ত করে না – রাজনীতির সাথে ধর্মকে মিশিয়ে দেওয়া, গণপিটুনি দেওয়া, পুলিশ, আমলাতন্ত্র এমনকি বিচার বিভাগকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করাই এদের প্রধান কাজ। ভারতককে হিন্দু রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে মোদীর শাসনকালে দেশের প্রশাসন আম্বেদকরের পূর্বাভাসমতন, “অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সংবিধানে চেতনার পরিপন্থী” হয়ে উঠেছে।