কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষে উত্তপ্ত পঞ্জাব-হরিয়ানা

গাজিপুর সীমাতেও আন্দোলনের পারদ ক্রমশ চড়ছে। এ বার কৃষকদের পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

January 4, 2021 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi
haryana

হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টি— সব কিছুই তাঁদের জেদের কাছে হার মেনেছে। ঠান্ডা, বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য টানা ৩৮ দিন ধরে দিল্লির উপকণ্ঠে আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা।  সোমবার সপ্তম দফার বৈঠক। এই বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র বেরোয় কি না, এখন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

বৈঠকের আগে রবিবারই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর দেখা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। সূত্রের খবর, এই অচলাবস্থা কাটাতে কী কী পদক্ষেপ করা জরুরি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও খবর, এই সঙ্কট কাটাতে সমস্ত সম্ভাব্য পথ নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে।  সোমবারের বৈঠকই কি শেষ, এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা তোমরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমি জ্যোতিষী নই। তবে আশাবাদী যে, যে সিদ্ধান্তই উঠে আসবে বৈঠকে তা দেশ এবং কৃষকদের স্বার্থেই হবে।”

পর পর ৬টি বৈঠক থেকে কোনও সামাধান সূত্র বেরোয়নি। ষষ্ঠ দফার বৈঠকে কৃষকদের দু’টি দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। সেগুলো হল, খড় পোড়ানোর জন্য মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে না এবং নয়া বিদ্যুৎ বিল আইন আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এই দাবি মেনে নিলেও কৃষকদের মূল্য লক্ষ্য কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং এমএসপি। তাই সপ্তম দফার বৈঠক নিয়ে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। সরকার কি এই দাবি মেনে নেবে, না কি বিকল্প কোনও প্রস্তাব রাখবে কৃষক সংগঠনগুলোর সামনে। সেই প্রস্তাব কি তারা মানবে, না কি অচলাবস্থা বহালই থাকবে? সোমবারের বৈঠকের আগে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরছে দেশ জুড়ে।

অন্য দিকে, সোমবারের এই বৈঠক নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে কৃষক সংগঠনগুলো।  কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য(এমএসপি)-র আইনি গ্যারান্টির দাবি যদি সরকার না মানে তা হলে আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো। এমনকি প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর বুকে র‌্যালি করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা।

তারা আরও জানিয়েছে, যদি তাঁদের দাবি না মানা হয় তা হলে আগামী ১৩ জানুয়ারি নতুন কৃষি আইনের কপি পুড়িয়ে লোহরি উৎসব পালন করা হবে। কৃষক নেতা মনজিৎ সিংহের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই বলেছে, “আমরা ১৩ জানুয়ারি কৃষি আইনের (Farm Laws) কপি পুড়িয়ে লোহরি উৎসব পালন করব। ২৩ জানুয়ারি কিসান দিবস উদ্‌যাপন করব।”

সিংঘু সীমানায় আন্দোলনরত আরও এক কৃষক নেতা ওঙ্কার সিংহের কথায়, “সরকার তাদের একরোখা মনোভাব ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। আমাদের আন্দোলন ৩৮ দিনে পড়েছে। আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত পিছু হটার প্রশ্ন নেই। এটা সত্যি হতাশাজনক যে, এত জন কৃষক মারা যাওয়ার পরেও সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না।”

হাজার হাজার কৃষক কনকনে ঠান্ডা, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিল্লিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। এক কৃষক নেতা হরমিত সিংহ কাদিয়ানের কথায়, “বৃষ্টি পড়ছে। তাঁবুগুলোর ভিতরে যাতে জল না ঢোকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কম্বল, গরম জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বয়স্ক এবং মহিলাদের জন্য।”

অন্য দিকে, সপ্তম দফার বৈঠকের আগের দিনই কৃষকদের আন্দোলনে (Farmers Protest) আরও তেতে উঠল হরিয়ানা (Haryana)। কয়েকশো কৃষক দিল্লির দিকে মিছিল করে এগোতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। রেওয়ারি-আলওয়ার সীমানাতেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।  সূত্রের খবর, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারী কৃষকদের মধ্যে খণ্ডষুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে হয় পুলিশকে। রেওয়ারির পুলিশ প্রধান অভিষেক জোরওয়ালকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কৃষকরা এগনোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের মাসানিতে একটি ওভারব্রিজের কাছে আটকে দেওয়া হয়েছে।

অন্য দিকে, পঞ্জাবের (Punjab) সাঙ্গরুর জেলায় এক দল বিক্ষোভকারী কৃষকের উপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি অশ্বিনা কুমার শর্মা একটি বৈঠক করছিলেন। কৃষকরা সেই বৈঠকের দিকে মিছিল করে এগোতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।

গাজিপুর সীমাতেও আন্দোলনের পারদ ক্রমশ চড়ছে। এ বার কৃষকদের পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তাঁদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবার আয়োজনও করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন এলাকার বাজপুর থেকে গাজিপুর সীনামায় আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাজপুরের এক সামাজকর্মী তথা কৃষক অজিত প্রতাপ সিংহ রানধওয়া বলেন, “গাজিপুর-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য কৃষক পরিবারের সদস্যদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন অর্থাৎ সোম এবং বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে বাস পরিষেবা দেওয়া হবে। যাঁরা ট্র্যাক্টরে যেতে পারবেন না, তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন।” বাজপুরে প্রচুর সংখ্যক কৃষক থাকেন।  আন্দোলনের শুরু থেকেই এই অঞ্চল থেকে বহু কৃষক দিল্লিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন রানধওয়া।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen