মমতার হস্তক্ষেপের পরেই রাজস্থানে মুক্ত বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা
রাজ্য সরকারের তরফে রাজস্থান সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরেই মঙ্গলবার বিকেলে বাংলার সেই শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৩১: রাজস্থানে কাজ করতে গিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের মান্নাই অঞ্চলের খিসাহার গ্রাম-সহ বেশ কিছু গ্রামের তিনশোর বেশি পরিযায়ী শ্রমিক। অভিযোগ, তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করে রাখা হয় কারণ তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন। আটক অবস্থা থেকেই একজন শ্রমিক কোনওক্রমে গোটা ঘটনা জানিয়ে ফোন করেন ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। মঙ্গলবার ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। ওই দিন অধিবেশনে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বিধানসভায় এসেছিলেন। অধিবেশনের বিরতির সময় মোশাররফ হোসেন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁকে রাজস্থানে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক হওয়ার বিষয়টি জানান। এর পরই বিধানসভায় বিষয়টি নিয়ে সরব হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বলাই কি অপরাধ? তা হলে বলে দেওয়া হোক, বাংলা ভাষা নিষিদ্ধ। রাজস্থানে যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁরা কারও বাবা, কারও ভাই, কারও সন্তান। তাঁরা কেউ বাংলাদেশি নন, তাঁরা উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার এলাকার বাসিন্দা, ভারতের নাগরিক।” এর পরই সরাসরি প্রশ্নের সুরে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই সরকার কি বাংলা ভাষাকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে?” কথাপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন তুলনা টানেন দক্ষিণ ভারতের। তথ্য তুলে ধরে মমতা বলেন, “তামিলনাড়ুতে অনেকে সিংহলি ভাষায় কথা বলেন, কেউ কেউ নেপালি ভাষাও বলেন। তা হলে কি তাঁদের শ্রীলঙ্কা বা নেপালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে?” গেরুয়া-রাজনীতির তথ্য তুলে ধরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বারবার দেখছি, বাংলা ভাষার সঙ্গে যেন এক অদৃশ্য শত্রুতা চলছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর আসছে। বাংলাকে বাদ দিয়ে কি ভারতবর্ষের ঐতিহ্য টিকবে?”
মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই ঘটনা যদি অবিলম্বে বন্ধ না হয়, বাংলার মানুষের প্রতি এই অন্যায় যদি দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চলতেই থাকে, তা হলে আমরা কড়া আন্দোলনে নামব। বাংলাকে হেয় করার কোনও চেষ্টাই বরদাস্ত করব না।”
ঘটনাটি জানার পর মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান। সেখানেই তাঁকে নির্দেশ দেন, রাজস্থানে আটক হওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের মুক্ত করার জন্য অবিলম্বে রাজস্থানের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলতে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তরফে রাজস্থান সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরেই মঙ্গলবার বিকেলে বাংলার সেই শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের ২০০ জন শ্রমিক ছাড়াও ছিলেন অসমের প্রায় ২০০ জন বাংলাভাষী শ্রমিক। জানা যাচ্ছে, তাঁদেরও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।