যশের প্রকোপ থেকে বই বাঁচাতে মরিয়া কলেজ স্ট্রিট

অনেকে যতটা পেরেছেন প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছেন বইপত্র

May 26, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ঐতিহ্যশালী কফি হাউসের নীচে স্বপনবাবুর পাঠ্যপুস্তকের ছোট্ট স্টল। গতবছর উম-পুনে তাঁর দোকানের প্রায় অর্ধেক বই নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। বরেন দাস, কলেজ স্ট্রিট (College Street) চত্বরের আর এক ব্যবসায়ী। গতবছর ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে জলে ভেসে গিয়েছে তাঁর প্রায় ২ লক্ষ টাকার নতুন বই। 


আম্ফানে বইপাড়া চত্বরে ক্ষয়ক্ষতির এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে। এল পরবর্তী মে মাস। আর‌ও এক বুধবার। শহরের কপালে নাচছে অন্য এক ঘূর্ণিঝড় যশ-এর ভ্রুকুটি। আর তাতেই কার্যত ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে ‘ঘরপোড়া’ কলেজ স্ট্রিট। মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ট চত্বরে দেখা গিয়েছে, বই বাঁচানোর তাগিদ। যতটা সম্ভব বাঁচানো সম্ভব, প্রাণপণে চলেছে তারই চেষ্টা। লকডাউন পরিস্থিতিতে সব লোকাল ট্রেন বন্ধ। তবু শ্রীরামপুর থেকে কোনওক্রমে কলেজ স্ট্রিটে ছুটে এসেছেন বরেন দাস। ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে। বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন ভোর ৬টায়। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে যখন পা রেখেছেন তখন ঘড়িতে প্রায় ১১টা। এলেন কীভাবে?’ বলেন, সাত‍টা ব্রেক জার্নি করে! কিছুটা সাইকেলে। কিছুটা গাড়ি ভাড়া করে। কিছুটা একেবারে হেঁটে। উদ্দেশ্য একটাই, উম-পুনের পর যে দৃশ্য ব্যবসায়ীদের দেখতে হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি যদি কিছুটাও ঠেকানো যায়।

সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট চত্বরের দু’টি ছবি। প্রথমটি, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট জলের তলায়। তার উপর ভাসছে বইয়ের সারি। অপরটি কলেজ স্ট্রিট চত্বর থেকে জল নামার পর রাস্তায় ফেলে বই শুকনোর দৃশ্য। সেই স্মৃতি এখন‌ও টাটকা। তাই ঝড়ের আগের দিন অনেকেই চলে এসেছেন। নীচের দিক থেকে বই যথাসম্ভব সরিয়ে রাখছেন অন্য জায়গায়। কেউ তুলে রাখছেন দোকানের বাঙ্কে, আবার কেউ ব‌ই নিয়ে চলে যান বাড়ি। যাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা, কাজটা তাঁদের পক্ষেই একটু সহজ। বিশ্বজিৎ বসু নামে এমন এক ব্যবসায়ী বলেন, কলেজ স্ট্রিট চত্বর অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উম-পুন আমাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। গত সপ্তাহে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে প্রায় আড়াই ফুট জল উঠে যায়।  চোখের সামনে দেখলাম প্রায় হাজার দশেক টাকার বই জলে ভিজে গেল! যশ-এ কী হবে জানি না। ক্ষয়ক্ষতি কিছু যে হবেই তা নিশ্চিত।

তাঁর বক্তব্য, আমরা কাছে থাকি। তাই তাড়াতাড়ি এসে কিছুটা হলেও বই সরাতে পেরেছি। তবে বইপাড়ার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। এমনই এক বই বিক্রেতা দিব্যেন্দু জানা। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। লকডাউনে দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছেন বাড়ি। ফোনে ওই ব্যবসায়ী বলেন, আম্ফানে ক্ষতি হয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার। এবার কত টাকার মাশুল গুনতে হবে তা ভেবেই তাঁর মন খারাপ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, অনেক ব্যবসায়ীর ছোট স্টল রয়েছে কলেজ স্ট্রিটে। বৃষ্টির জলের হাত থেকে বই বাঁচানোর মতো সুরক্ষিত কোন‌ও জায়গা নেই তাঁদের। তাঁরা যতটা পেরেছেন প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছেন বইপত্র। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের একটাই প্রশ্ন একটাই আতঙ্ক, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে তাঁদের দোকানের, ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতি কতটা হবে! 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen