মূক-বধির হিন্দু ‘ছেলে’কে ঘরে ফেরাতে সীমান্তপার

মানবিকতাই হল একটি মানুষের প্রধান গুণ। আর এই মানবিকতার টান দেশ-কাল মানে না, মানে না ধর্মের কাঁটাতারও।

January 25, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যেঃ সংবাদ প্রতিদিন

মানবিকতাই হল একটি মানুষের প্রধান গুণ। আর এই মানবিকতার টান দেশ-কাল মানে না, মানে না ধর্মের কাঁটাতারও। এই সর্বজনীন মানবধর্মেরই সাক্ষী রইল নদিয়া। আখ্যানের কেন্দ্রে মূক-বধির এক অজ্ঞাতপরিচয় ভারতীয় যুবক এবং তাঁর বর্তমান অভিভাবক এক বাংলাদেশি প্রৌঢ়। নিজের সর্বস্ব বাজি রেখে যিনি সেই ‘পালিত’ পুত্রকে পরিজনের হাতে ফিরিয়ে দিতে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত প্রায় চোদ্দো বছর আগে। বাংলাদেশের চুয়াডাঙা জেলার দর্শনা দামুড়হুদার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আরিফুল ইসলাম নিজের জমিতে চাষ করছিলেন, হঠাৎ নজরে পড়ে, ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া মাঠে বসে এক বালক হাপুসনয়নে কাঁদছে। দেখে থাকতে পারেননি। সীমান্তে তখনও কাঁটাতারের বেড়া মাথা তোলেনি। এপারে এসে আরিফুল বুঝতে পারেন, ছেলেটি কথা বলতে পারে না। হাজার চেষ্টা করেও জানা যায়নি, ওর বাড়ি কোথায়। তবে জানান যায় যে সে হিন্দু বাড়ির ছেলে। অসহায় বালককে একাও ভাবে ফেলে যেতে পারেননি তাই আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে কোলে তুলে সোজা বাড়ি নিয়ে যান।

তখন থেকেই আরিফুলের পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছে ভিনধর্মের ওই নামগোত্রহীন ভিনদেশি ছেলে, যে কিনা এখন তরতাজা তরুণ। এবার আরিফুল চাইছেন, ওকে নিজের ঘরে ফেরাতে। নিজের মা-বাবার হেফাজতে পৌঁছে দিতে। সেই তাগিদে চেয়েচিন্তে টাকাপয়সা জোগাড় করে আরিফুল এদেশে এসেছেন। পালিত ছেলের একটি ছবি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষের দোরে দোরে। দেখুন তো, চোদ্দো বছর আগে এমন কেউ হারিয়ে গিয়েছিল কি না?

বৃহস্পতিবার দুপুরে আরিফুলের দেখা মিলল নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাজনা বাজারে। খালি গা, এক যুবকের ছবি হাতে বিভিন্ন দোকানে ঢুঁ মারছেন। করজোড়ে সবাইকে মিনতি করছেন ছবিটা খুঁটিয়ে দেখতে। যদি নিরুদ্দেশ কারও সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। জানালেন, সময় খুব কম, মাত্র দু’দিনের ভিসা মিলেছে। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী নদিয়ার হাঁসখালি, গাজনা, গেদের বাজারে বাজারে ঘুরেছেন। এখনও সন্ধান মেলেনি। তবে মিলতেও তো পারে!

আরিফুলরা ছ’ভাই। চোদ্দো বছর আগে সাত-পাঁচ না ভেবে ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। ও সকলের আপন হয়ে গিয়েছে। কেউ ওকে বাইরের লোক ভাবতে পারে না। সে সময় ওঁদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তাই খোঁজখবর করতে পারেননি। কিন্তু এবার ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরানো কর্তব্য। কান্নাভরা গলায় তিনি বললেন, “ও চলে গেলে আমাদের খুব খারাপ লাগবে। আবার ভাল লাগবে এই ভেবে যে, ও নিজের মানুষদের কাছে ফিরেছে। এটুকু তো রাস্তা। ইচ্ছে হলেই দেখা হবে আবার!”এক কথায় মানবিকতার এই নজির আজকের পরিস্থিতিতে বিরল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen