কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা মারাত্মক হতে পারে! কখন সাবধান হবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক জীবনে কয়েকটি অভ্যাস বদলালেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কিছুটা সুরাহা হতে পারে।

February 21, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গরমের দিনে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় অনেকেই ভুগতে থাকেন। তবে বলা হচ্ছে, বারবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্য়া হতে থাকলে, তা শরীরের পক্ষে সুখকর নয়। দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বহু শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। সেটি মারাত্মক কষ্টকর পরিস্থিতি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক জীবনে কয়েকটি অভ্যাস বদলালেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কিছুটা সুরাহা হতে পারে। এছাড়াও খাওয়ার ধরনের কিছু বদল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রোধ করতে পারে।

সপ্তাহে তিনবারের কম স্টুল হলে তখন তাকে কনস্টিপেশন বলা যায়। তবে ভারতীয়দের ডায়েটে শাকসব্জির মাত্রা বেশি থাকে। তাই ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সপ্তাহে চারবারের কম স্টুল হচ্ছে কি না তা দেখা দরকার। এছাড়া ‘ব্রিস্টল স্টুল’ মাপদণ্ড অনুসারে বোঝা যেতে পারে কোনও ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত কি না।

সপ্তাহে চারবার স্টুল হলেও অনেকের স্টুলের প্রকৃতি ভিন্ন হতে পারে। স্টুলের প্রকৃতি দেখেও বোঝা যায় একজন ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন কি না।

‘ব্রিস্টল স্টুল’ মাপদণ্ড অনুসারে ৭ ধরনের স্টুল হতে পারে—

১) খণ্ড খণ্ড গোলাকার বাদামের মতো শক্ত কালো মল।

২) লাম্পযুক্ত সসেজ আকারের মল।

৩) একাধিক ফাটলযুক্ত কালো রং-এর সসেজের আকৃতির মল।

৪) লতানো মল। গাত্র মসৃণ এবং প্রকৃতিতে নরম।

৫) বড়ির আকারের মল।

৬) মাশরুমের মতো স্টুল। (ডায়ারিয়া হলে এমন মল বেরতে পারে)।

৭) জলের মতো মল (ডায়ারিয়া)।

ব্রিস্টল স্টুল স্কেল অনুসারে, কোনও ব্যক্তির প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রকৃতির মল নির্গত হলে তাঁর কনস্টিপেশনের থাকতে পারে। কনস্টিপেশন আরও একটি শর্ত হল কোনও ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করে বা কোঁৎ দিয়ে মল প্রয়োগ করতে হচ্ছে কি না।

কোষ্ঠকাঠিন্য হয় কেন?

একাধিক কারণ দায়ী থাকতে পারে—

ক) অনেকের বংশেই কোলনের মুভমেন্ট বা চলন কম থাকার সমস্যা থাকে। ফলে ওই পরিবারের সন্তানেরও কনস্টিপেশনের সমস্যা হতে পারে।

খ) বড় কারণ হল খাদ্যাভ্যাস। দেখা গিয়েছে শাকসব্জি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়েটে শুধুই মাংস থাকলে, ভাজাভুজি বেশি খেলে, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার বেশি রাখলে একসময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গ) অন্যান্য কারণ— শরীরচর্চার অভাব, ওজন বৃদ্ধি, হাইপোথাইরয়েডিজম, শরীরে ক্যালশিয়ামের তারতম্য, কোলনে টিউমার, কোলনের বাইরের অঙ্গের সংক্রমণ যেমন লিম্ফ নোড-এর বৃদ্ধি।
কনস্টিপেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?

একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে—

১) রোগীর ফিসার, পাইলস দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২) কোলনে বর্জ্য জমে সংক্রমণ।

৩) কোলনের দেওয়ালে ছোট ছোট পকেট তৈরি হতে পারে। এই সমস্যাকে বলে ডাইভার্টিকুলোসিস। কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য এমন সমস্যা হয়।

৪) বারংবার চাপ প্রয়োগের কারণে সলিটারি রেকটাল আলসার সিনড্রোম বা স্টারকোরাল আলসার হয় কারও কারও। রোগীর স্টুল বেরনোর সময় রক্তপাত হতে থাকে।

মহিলাদের মধ্যে কনস্টিপেশনের জটিলতা বেশি হতে দেখা যায়। আর তার পিছনে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন হরমোনের যথেষ্ট ভূমিকা থাকে।

রোগীর সঙ্গে কথা বলে আগে মূল সমস্যা ধরার চেষ্টা করা হয়। কোলনের মুভমেন্ট কম হচ্ছে বুঝলে রোগীকে বেশি মাত্রায় সবুজ শাকসব্জি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু ওষুধ থাকে যেগুলি রোগীকে দিলে কোলনের মুভমেন্ট ভালো হয়। আবার এমন ওষুধও দেওয়া হয় যা কোলনকে উদ্দীপিত করে। আবার কিছু ওষুধ আছে যা মলের পরিমাণ বাড়ায়। এর ফলেও কোলনের মুভমেন্ট হয়। কিছু রোগীর আবার রেকটামের গঠনগত জটিলতার জন্য কনস্টিপেশন দেখা দিতে পারে। রেকটামের অ্যাঙ্গেল স্বাভাবিক না হলে, পিঠের স্নায়ুর সমস্যা হলে, ডায়াফ্রামের সমস্যা থাকলে বেগ আসলেও স্বাভাবিকভাবে মল বেরয় না। এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে রয়েছে বায়োফিডব্যাক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে ডেফিকেশন-এর সময়ে কীভাবে বসতে হবে, শরীরের ভঙ্গি কেমন হবে, কখন চাপ দেবেন, শ্বাস কখন নেবেন সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মেনুতে থাকুক ফাইবারপূর্ণ খাদ্য। সব্জি দিয়ে ডালিয়া, ওটস খেতে পারেন। যা শরীরে ফাইবারের চাহিদা অনেকটাই মেটাবে। গমের রুটি, সব্জি খাওয়া যেতে পারে। ভাতও খান, তবে সঙ্গে শাকসব্জিও থাকা দরকার। এছাড়া মাছ, মাংসের পদেও যথেষ্ট মাত্রায় সব্জি দিতে পারলে ভালো হয়। শুধু লাঞ্চ বা ডিনারে নয়, ব্রেকফাস্টেও ফাইবারনির্ভর খাবার খেতে হবে। দই দিয়ে ওটস বা সবজি দিয়ে ভেজ স্যান্ডউইচ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কিছুটা বেলায় একটা গোটা ফল। পাকা পেঁপে, আপেল, লেবু, কলা, তরমুজের মতো ফল ভীষণ উপকারী। সন্ধেবেলায় ফাস্ট ফুডের বদলে খাবারের তালিকায় আনতে হবে স্যালাড, স্প্রাউট। ওজন বেশি থাকলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। তাই এক্সারসাইজ করে কমাতে হবে ওজন। প্রতিদিন ৩০-৩৫ মিনিট করে হাঁটার অভ্যেস ওজন কমানোর সঙ্গে কনস্টিপেশনের সমস্যাও দূরে থাকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen