ফাল্গুনের শুক্লপক্ষে গ্রামের শীতলাতলায় রান্না উৎসব, হাজার হাজার উনুন জ্বলে, কোথায় জানেন?
ফাল্গুনের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার গোটা গ্রাম শীতলাতলায় উনুন জ্বালিয়ে বসে। সেদিন গোটা গ্রামজুড়ে অরন্ধন। তবে উপবাস নয়।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হুগলি বা বাংলার অন্যত্র রান্নার উৎসব কম হয় না। শুধুমাত্র হুগলিতেই একাধিক রকমের রান্না উৎসব পালন হয়। কিন্তু আয়োজনে, আচারে সে সব উৎসব থেকে ভিন্ন চুঁচুড়ার কোদালিয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সিমলা গ্রামের রান্নার উৎসব। ফাল্গুনের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার গোটা গ্রাম শীতলাতলায় উনুন জ্বালিয়ে বসে। সেদিন গোটা গ্রামজুড়ে অরন্ধন। তবে উপবাস নয়। এ রীতি শতাব্দী প্রাচীন।
এই অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয়। হাজার হাজার উনুন জ্বলে। অনেকের বাড়ি এ সময় আত্মীয়রা আসেন উৎসব উপলক্ষ্যে। সবাই মিলে চলে আসেন রান্না-খাওয়ার অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার বিরাট মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ সিমলার শীতলাতলা। একদিকে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে অনুসরণ। অন্যদিকে বাংলার স্থানীয় উৎসব পালন। জমজমাট ভিড়ে উদযাপিত দু’টি ধারাই।
শীতলা মন্দিরের পুরোহিত তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বপ্নাদেশে বসন্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। আজও তা স্থানীয় মানুষ বুকে করে ধরে রেখেছেন।’ মরশুমি রোগ থেকে মুক্তির জন্য শীতলা, ষষ্ঠীর মতো লৌকিকদেবীর পুজো হুগলিতে চালু হয়েছিল। বস্তুত সেই ধারারই অনুসরণ দেখা যায় দক্ষিণ সিমলার সমবেত রান্না উৎসবে। কালের গতিকে যা হয়ে উঠেছে মানুষের মিলনের উৎসব, এক ভিন্নধারার বনভোজন। বারো মাসে তের পার্বণের বঙ্গে যা এনেছে বাড়তি আমেজ।
মঙ্গলবার রান্না উৎসবের মাঠে উপস্থিত ছিলেন ৭০ বছরের ললিতা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে এই প্রথা বা লোকাচার চলে আসছে। শতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা একদিনের জন্য গোটা গ্রাম মিলিত হই। এই মেলামেশার একটা আনন্দ আছে।’ শীতলাতলায় রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন বছর বাইশের মণিরা কোলে। তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের একটি অদ্ভুত মজা আছে। সারা বছর পৃথক হাঁড়ি হলেও এক পরিবারের সব ভাই পরিবার নিয়ে এই একদিন একত্রে রান্না করেন। পুজো আছে, লোককথা আছে। কিন্তু সেসবের বাইরেও যে মিলনের উৎসব, সেই প্রথাকে আমরা আঁকড়ে ধরে আছি। আমিও চাই এই প্রথা বা লোকাচার যাই হোক, তা চলতেই থাকুক।’