ভ্যাকসিনের ছবি এঁকে রোজগারের আশায় বাংলার পট শিল্পীরা

পশ্চিম মেদিনীপুরের এ গ্রামের প্রসিদ্ধি এখানকার রংমিস্ত্রিদের দক্ষতার জন্যই।

August 21, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

করোনা থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিন। পটচিত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার ছবি এঁকে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছেন শিল্পীরা। যে ভাইরাস কেড়ে নিয়েছিল রোজগার। সেই ভাইরাসের প্রতিষেধকের ছবি এঁকেই দিনগুজরানের স্বপ্ন দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের পট শিল্পীরা (Pattachitra Artist)। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া-গ্রামে সাড়ে তিনশো পট চিত্রকরের বাস। এখানে প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল রঙিন। কোথাও রামায়ণের ছবি। কোনও খড়ের চালের মাটির দেওয়াল জুড়ে সীতাহরণের দৃশ্য।

পশ্চিম মেদিনীপুরের এ গ্রামের প্রসিদ্ধি এখানকার রংমিস্ত্রিদের দক্ষতার জন্যই। বাড়ির দেওয়ালে নিঁখুত শৈল্পিক কাজ আঁকার জন্য এ গ্রামের রঙ মিস্ত্রীকে ডেকে নিয়ে যান শহরের অনেকেই। আদতে এ গ্রামে যার সঙ্গেই ধাক্কা লাগবে সেই এক জন পটুয়া বা পটশিল্পী।

‘পট’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পট্ট’ কথাটি থেকে। যার অর্থ হল বস্ত্র। চলতি কথায় পট হল কাপড় বা কাগজের উপর বিশিষ্ট ঢঙে আঁকা চিত্র বা চিত্রাবলী। পিংলার পটশিল্পীরা এই চিত্রাবলী বিক্রি করতেন কলকাতার নানান মেলায়। করোনা আবহে বন্ধ হয়ে যায় সেসব মেলা। রোজগারে টান পড়ে। গ্রামের পটশিল্পী বাপি চিত্রকরের কথায়, করোনার আঘাতে রোজগার মাথায় উঠেছিল। গ্রামের গরীব মানুষের পট চিত্র কেনার টাকা নেই। মেলাগুলো থেকেই রোজগার হতো।

১৭ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন শুরু হয়েছে রাজ্যে। প্রতিটি মানুষ যাতে ভ্যাকসিন নেয় তার জন্য আহবান জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সচেতনতা প্রচার করে যদি রোজগার হয়? এই চিন্তা থেকেই পটশিল্পীরা বদলে ফেলেছে ছবির বিষয়। রামায়ণ, মহাভারত পুরাণের গল্প ছেড়ে তারা এখন করোনা থেকে বাঁচার উপায় ফুটিয়ে তুলছেন পটচিত্রে। কোনও ছবিতে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখার বার্তা, কোথাও বা ভ্যাকসিন নেওয়ার ছবি। তার সঙ্গে বাঁধা হয়েছে করোনা তাড়ানোর বিশেষ গান। গ্রামের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে সে গান শুনিয়ে মিলছে চাল-ডাল। অনেকে অনলাইনে বিক্রি করছেন করোনার এই পটচিত্র। পটশিল্পী খাদু চিত্রকরের কথায়, দু’ফুটের পটচিত্র অনলাইনে হাজার তিনেক টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফেসবুক একাউন্ট খুলে নিজেদের পটচিত্র বানিয়ে তার ছবি আপলোড করছেন শিল্পীরা। পরিবেশ বান্ধব জিনিসের চাহিদা ব্যাপক। সেই কথা মাথায় রেখে ভেষজ রঙ দিয়ে আঁকা হচ্ছে পটচিত্র। কাঁচা হলুদ থেতো করে হলুদ রঙ, পুঁইশাকের ফল থেকে লাল আর অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি থেকে নীল রঙ তৈরি করছেন পটশিল্পীরা। বেলের আঠায় সেই রঙ মিশিয়ে কাপড়ের উপর ছবি আঁকা হচ্ছে।

বাংলার বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতির অংশ এই চিত্রকথা আজ বিলুপ্তির পথে। পটশিল্পীরা বলছেন, যে করোনা রোজগার কেড়ে নিয়েছিল, তাকে ঘিরেই ফের একটু একটু করে মাথা তুলছে পটচিত্রশিল্প।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen