ওমিক্রনের হাত ধরে নির্মূলের পথে করোনার মারণ ক্ষমতা! দাবি বিশেষজ্ঞদের

বরং মানুষকে মৃদুভাবে সংক্রামিত করে এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে বছরের পর বছর স্বমহিমায় থাকা যায়। যেমন টিকে রয়েছে ‘কমন ফ্লু’ বা ‘সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা’।

December 14, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

আর বেশি দিন নয়। ওমিক্রনই সম্ভবত বিশ্বব্যাপী মহামারীর অন্তিম পর্যায়। এই স্ট্রেইনের হাত ধরে শেষ হতে চলেছে করোনার মারণ ক্ষমতা। অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে এই ভাইরাসের বিবর্তন। মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গ এবং দেশ-বিদেশের বিখ্যাত মহামারী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে তার মানে এই নয় কোভিড-১৯ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। আদতে যে কোনও চতুর ভা‌ইরাস জানে, দীর্ঘদিন টিকে থাকতে হলে বেশি মানব নিধনে লাভ নেই। বরং মানুষকে মৃদুভাবে সংক্রামিত করে এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে বছরের পর বছর স্বমহিমায় থাকা যায়। যেমন টিকে রয়েছে ‘কমন ফ্লু’ বা ‘সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা’। করোনাও সেই পথে হাঁটবে। ধীরে ধীরে পরিণত হবে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো বছরভরের আর পাঁচটা রোগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র সংক্রামক এবং অসম্ভব মারণ ক্ষমতা—ভাইরাসের ক্ষেত্রে সাধারণত দু’টি চরিত্রের আত্মপ্রকাশ একসঙ্গে ঘটে না। ঠিক যেমন ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ (সার্স) এবং ‘মিডল ইস্ট রেসিপিরেটরি সিনড্রোম’ (মার্স)। কোভিডের এই দুই ‘পূর্বসূরি’ মারাত্মক মারণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি মানুষকে ভোগাতে পারেনি। বর্তমানে প্রবলভাবে টিকেও নেই। সার্সের মারণক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ১ জন। মার্সের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রতি দু’জনে একজনের কাছাকাছি। ২০০২-’০৩ সাল—এই দু’বছরেই সীমাবদ্ধ ছিল সার্স। ভুগিয়েছিল ৮,০৯৬ জনকে। ৭৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল এই রোগে। মৃত্যুহার ৯.৬ শতাংশ। মার্সের সূত্রপাত ২০১২-এ। এখনও তার প্রকোপ রয়েছে। কিন্তু সংক্রামক ক্ষমতা হারিয়েছে। এতদিনে মাত্র ১,৩৬০ জন আক্রান্ত। অথচ মৃত্যুহার তীব্র—৩৯ শতাংশ! ৫২২ জন। সেখানে তাদের উত্তরসূরি কোভিড? মাত্র দু’বছরে সে খাতায় কলমে ভুগিয়েছে ২৭ কোটির বেশি মানুষকে! মৃতের সংখ্যা ৫৩ লাখ। কিন্তু মৃত্যুহার? ২ শতাংশেরও নীচে।

আইসিএমআর-এর মহামারীবিদ্যার প্রধান ডাঃ সমীরণ পান্ডা জানিয়েছেন, ‘কোভিড-১৯ একটি প্যাটার্ন বা ধরন মেনে চলছে। প্রথম ধাপে কাতারে কাতারে মানুষকে সংক্রামিত করল। মৃত্যু হল কিছু মানুষের। দ্বিতীয় ধাপে বহু মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হল। আবার ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা পেল অনেকে। অর্থাৎ, বড় ধাক্কা খেল কোভিড। তৃতীয় ধাপে সে বুঝল, টিকে থাকতে হলে মানুষের সঙ্গে সমঝোতায় আসতেই হবে। মানুষও বেঁচে থাকবে, কোভিডও মৃদু হয়ে টিকে থাকবে। মহামারী শেষদিকে বলা‌ই চলে।’ অনেকটা একই সুর এসএসকেএম হাসপাতালের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডাঃ যোগিরাজ রায়ের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘মহামারী শেষের পর্যায়ে। তবে মাস্ক, কোভিড বিধি পালন এইসব নিয়ম আরও আঁকড়ে ধরতে হবে আমাদের। কোভিড চাইবে সংক্রমণ বাড়াতে। আমাদের কাজ হবে শৃঙ্খল ভাঙা। কারণ, দেশে অশক্ত, বৃদ্ধ, প্রচুর কো-মরবিডিটি থাকা মানুষ নেহাত কম নয়। সংক্রমণের মৃদু স্পর্শও তাদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে।’ হোয়াইট হাউসের মুখ্য মেডিক্যাল উপদেষ্টা দিকপাল চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ অ্যান্টনি ফাউসি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, করোনা হয়তো মুছে যাবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen