মণিপুরে অশান্তি ঠেকাতে ব্যর্থ BJP-র ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’, ফের জারি করা হল কারফিউ

এই পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতার পরিবেশ মণিপুরে অতীতেও ছিল, সংঘাতের পরে আরও বেড়েছে।

May 23, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ফের জারি করা হল কারফিউ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মণিপুরের অশান্তি ঠেকাতে ব্যর্থ বিজেপি’র ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’। কয়েক দিন বিরতির পর আবারও নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানী ইম্ফলে এ ঘটনা ঘটে। নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফলের চেকন অঞ্চলে যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধায় সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনীকে তলব করা হয়েছে।

মণিপুর পুলিশ সূত্রে খবর, রাজধানী ইম্ফলের নিউ চেকন এলাকায় মেইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে হাতাহাতি হয় দু’তরফে। তার পরেই লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। তাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। বাজারের বেশ কিছু দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে মণিপুর রাজ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।

হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে ৩ মে চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর’ (এটিএসইউএম) ‘আদিবাসী সংহতি পদযাত্রা’র ডাক দেয়। সেখান থেকে হিংসার সূত্রপাত হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই হিংসায় ৭০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়। হাজার হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়।

কুকি, নাগাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পড়াশোনা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে মেইতেই সম্প্রদায়। এ অবস্থায় যদি তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তাদের আরও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়, তবে তারা আরও এগিয়ে যাবে। এতে পিছিয়ে পড়বে অন্যান্য জনজাতীয় জনগোষ্ঠী।
কুকিরা খোলাখুলি অভিযোগ করেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের প্রশাসনে থাকতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। এমনকি বিজেপির নিজের আটজন বিধায়ক (এমএলএ) সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হননি। তাঁরা ‘পৃথক প্রশাসন’ চেয়েছেন, যা কার্যত পুরোনো পৃথক কুকিল্যান্ড রাজ্যের দাবির সমতুল্য। বস্তুত, রাজ্য বিধানসভার কুকি বিধায়কেরা উত্তর–পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যের উপজাতি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন মিজোরামে গিয়ে। তাঁরা বলছেন, মণিপুরে তাঁদের নিরাপত্তা নেই।

এই পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতার পরিবেশ মণিপুরে অতীতেও ছিল, সংঘাতের পরে আরও বেড়েছে। উত্তর–পূর্ব ভারতের দীর্ঘ বঞ্চনা ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং তার জেরে ভিন্ন রাষ্ট্রের দাবিতে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। ছোট–বড় সব জাতিগোষ্ঠীর এখনো নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী এবং কমবেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, যে কারণে সাম্প্রতিক সংঘাত দ্রুত ছড়িয়েছে। বর্তমানে উত্তর–পূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্যে কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে। এ অবস্থায় মণিপুরসহ উত্তর–পূর্ব অশান্ত হলে ভারতের সমস্যা বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশষজ্ঞ মহল। তাঁদের মতে বিজেপি সরকারের মণিপুরের বিষয়ে আর‍ও সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে এর পরিণতি ভয়ঙ্কর দিকে যেতে চলেছে। যা উত্তর-পূর্ব ভারত তথা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মোটেই সুখকর হবে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen