ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ডেকার্স লেন
তবে ধীরে ধীরে খদ্দেরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াকে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন বিক্রেতারা।

রাজ্যের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক। সেই সঙ্গে সচল হতে শুরু করেছে শহরের ‘খাওগলি’ ডেকার্স লেন (Dacre’s Lane) । ক্রেতার সংখ্যা খুব বেশি না বাড়লেও ক্রমেই স্বাভাবিকের পথে জেমস হিকি সরণি এবং ডালহৌসি চত্বর। নিউ নর্মালে পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ট্রেন চলাচল শুরু হলে যত মানুষ আসবেন বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। তবে ধীরে ধীরে খদ্দেরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াকে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন বিক্রেতারা।
লকডাউনের (Lock Down) পর থেকে মন্দা শুরু হয় ডেকার্স লেনের ব্যবসায়। এমনকী লকডাউন পরবর্তী কালেও চলতে থাকে ডামাডোল। স্বাস্থ্যবিধির জাঁতাকল, ভাইরাসের আতঙ্ক গ্রাস করে শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যস্ততম ফুডকোর্টকে। ব্যবসায়ীদের মতে, সেই সময় ক্রেতার সংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে নেমে যায় ১০ শতাংশে। তবে ট্রেন চলাচল শুরু হতেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে অফিস পাড়া। আর তাতেই হাল ফিরছে চিত্তবাবু, সুশান্তবাবুদের দোকানে। ডেকার্স লেনের ব্যবসায়ী সুশান্ত হালদার জানিয়েছেন, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ২৫ শতাংশ মানুষ ট্রেনে আসাযাওয়া শুরু করেন। সেটা ইতিমধ্যেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ শতাংশের কাছাকাছি। পরবর্তী কালে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এখনও পর্যন্ত ডেকার্স লেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয় কেন? বিক্রেতাদের মতে, এখনও ধর্মতলা চত্বরের সমস্ত অফিস পুরোদমে চালু হয়নি। কোথাও চলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম নীতি, আবার কোথাও চাকুরীজীবীরা অফিসে যাচ্ছেন একদিন অন্তর। কোনও কোনও অফিস কর্মীদের মনে আবার করোনা ভীতি জাঁকিয়ে বসেছে। দুপুরের খাবার বাড়ি থেকেই নিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে খাদ্যপ্রেমীদের জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই রেখেছেন খাদ্যগলির ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার ডেকার্স লেন চত্বর ঘুরে দেখা গেল, বেশকিছু দোকানে রাখা হয়েছে হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার।
অন্যদিকে, ওই এলাকার বহু ব্যবসায়ী অফিসপাড়ার বিভিন্ন বড় কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করেন। সেখান থেকেও কোনও অর্ডার পাচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। ধর্মতলা চত্বরের অফিসগুলিতে খাবারের কোনও বড় অর্ডার থাকলে ডেকার্স লেনের নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীরাই সেই খাবার সরবরাহ করে থাকেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অফিস কর্মীদের (Office Employee) স্বাস্থ্যবিধি এবং সচেতনতার কারণে সেই অফিসগুলি থেকেও বড় কোনও অর্ডার তাঁদের কাছে আসছে না।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আলু, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সমস্যায় ফেলেছে ডেকার্স লেনের ব্যবসায়ীদের। অনেক বিক্রেতাই তাই কমিয়ে দিয়েছেন আলু, পেঁয়াজের ব্যবহার। ভাতের হোটেলের এক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, যেখানে আগে প্রতিদিন ৫ কেজি পেঁয়াজ কেনা হতো, এখন তা কমিয়ে দু’কেজি করা হয়েছে। আলুভাতে পেঁয়াজের ব্যবহার কমানো হয়েছে। ভাত-সবজি, কিংবা রুটি-তরকারির সঙ্গে আগে পেঁয়াজ পাওয়া যেত বিনামূল্যে। সেটাও এখন অনেক দোকানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একদিকে যথেষ্ট ক্রেতার অভাব, অন্যদিকে আলু পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য— কপালে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে জেমস হিকি সরণির ফুডকোর্ট মালিকদের।