প্রফুল্ল চাকীর মৃত্যুরহস্য 

আজও মুখে মুখে ফেরে, বহু দেশপ্রেমী জানতে চান, ডাকাবুকো সেই যুবক প্রফুল্ল চাকী কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন?

December 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

গল্পের গাড়ি একবার চলতে শুরু করলে প্রতি বাঁকে প্রশ্ন, প্রতিটি অধ্যায়ে আজও সমাধান না হওয়া ধোঁয়াশা। তেমনই এক প্রশ্ন আজও মুখে মুখে ফেরে, বহু দেশপ্রেমী জানতে চান, ডাকাবুকো সেই যুবক প্রফুল্ল চাকী কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন? আমাদের আজকের পরিক্রমা সেই মিথকে ঘিরেই।

প্রচলিত ধারণা 

উল্লাসকর দত্তের বানানো বোমা নিয়ে প্রফুল্ল চাকী মুজফফরপুর যান। সেখানে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ চলে। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল সন্ধেয় তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশদ্বারে তারা কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ির জন্য ওত পেতে থাকেন। একটি গাড়ি আসতে দেখে তারা বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না, বরং দুইজন ব্রিটিশ মহিলা মারা যান। তাঁরা ছিলেন ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। 

প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম তৎক্ষনাৎ ওই এলাকা ত্যাগ করেন। দু’জনে আলাদা পথে পালাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২ মে তারিখে ট্রেনে নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক পুলিশ দারোগা সমস্তিপুর রেল স্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন। মোকামা স্টেশনে পুলিশের সম্মুখীন হয়ে প্রফুল্ল পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোণঠাসা হয়ে পড়ে তিনি ধরা দেওয়ার বদলে আত্মাহুতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।

এই তথ্যে ভ্রান্তি কোথায়

পরবর্তী কালে দেখা যায়, প্ৰফুল্ল চাকীকে শরীরের যে অংশে গুলি করা হয়েছে, একজন বা হাঁতির পক্ষেই নিদেকে সেই অংশে গুলি করা সম্ভব। কিন্তু প্রফুল্ল ডানহাতি ছিলেন। প্রফুল্লকে এক বার নয় একাধিক বার গুলি চালানো হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, একজন আত্মহত্যাকারী নিজের ভাইটাল অর্গানে একটি গুলি চালানোর পর তার শরীরে আর কোনও শক্তি থাকে না।

বলা হয় প্রফুল্লকে কোনঠাসা করে ফেলেছিল নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাহিনী। কিন্তু প্রফুল্লর শরীরে যে পরিমাণ শক্তি ছিল, তাঁকে তিনজন মিলে কোনঠাসা করা খুব সহজ কথা নয়। তার উপরে নাকি তাঁর কাছে বন্দুকও ছিল!‍ প্রফুল্লের দেহের পোস্টমর্টেমও হয়নি।

এই সব তথ্যগুলি যাচাই করে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের গবেষকরা স্থির সিদ্ধান্তে আসেন, প্রথমে নিদারুণ অত্যাচার, তারপরে পিস্তল দিয়ে গুলি। এই ছিল প্ৰফুল্লের পরিণতি। ঐতিহাসিক নির্মলকুমার নাগ মহাশয় মনে করেন, প্ৰফুল্লকে খুন করে তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়েছিল। ফাঁসি হয় প্রুফুল্লের সঙ্গী ক্ষুদিরামের।

তবে একটি মৃত্যুতে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের থামানো যায়নি সেদিন। ১৯০৮ সালের ৯ নভেম্বর নন্দলালকে হত্যা করে প্রফুল্লর মৃত্যুর বদলা নেন বাঙালি বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র পাল ও রণেন গঙ্গোপাধ্যায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen