বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ দিল্লি পুলিশের, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মমতা-রূপম
দিল্লি পুলিশের এই ভাষাব্যবহারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শনিবার এক্স হ্যান্ডেলে বিস্ফোরক পোস্ট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৩০: দিল্লি পুলিশের একটি সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আওতাধীন দিল্লি পুলিশের এই ভাষাব্যবহারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শনিবার এক্স হ্যান্ডেলে বিস্ফোরক পোস্ট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, “দেখুন, কীভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলছে! বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা। জাতীয় সংগীত ও বন্দে মাতরম্ রচিত এই ভাষায়। কোটি কোটি ভারতবাসীর ভাষাকে এভাবে বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া লজ্জাজনক, অপমানজনক, অসাংবিধানিক ও দেশদ্রোহিতার শামিল।”
মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, “এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে দেশের সমস্ত বাংলাভাষী মানুষকে অপমান করা হচ্ছে। এটা কেবল ভুল নয়, ইচ্ছাকৃত অপমান—যার উদ্দেশ্য বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মসম্মান মুছে ফেলা। আমরা চাই, সারা দেশের মানুষ এই বাঙালিবিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হোন।”
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী রূপম ইসলাম। তিনি লেখেন, “এটা কী? বাংলা কি ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার একটি নয়? তাহলে কেন একে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হচ্ছে? চরম অজ্ঞতা ও বোকামির পরিচয়!”
এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। #BengaliIsIndian, #RespectBanglaLanguage, #বাংলাআমারগর্ব ট্রেন্ড করছে এক্স-সহ নানা মাধ্যমে।
অনেকেই লিখছেন: “বাংলা ভাষার অপমান মানে ২৫ কোটির অপমান! এটা কেবল ভাষার অপমান নয়, বরং আত্মপরিচয় ও সাংবিধানিক মর্যাদার বিরুদ্ধে আক্রমণ।”
আরও অভিযোগ উঠছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আগে থেকেই বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও হেনস্তার ঘটনা ঘটে চলেছে, আর এবার দিল্লিতে সরকারি নথিতে বাংলা ভাষাকে ‘বিদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া সেই ধারাবাহিক আক্রমণেরই অংশ।
একাধিক সাহিত্যিক, অধ্যাপক, শিল্পী ও সামাজিক কর্মী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।তাঁদের মতে, “বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা শুধু তথ্যগত ভুল নয়, এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও আত্মমর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত।”
এই বিতর্কে এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বা দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য সামনে আসেনি। তবে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ, রাজনৈতিক চাপ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মুখে সরকার কত দ্রুত এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়, সে দিকে তাকিয়ে বঙ্গবাসী।