বঙ্গ বিজেপির প্রার্থী বাছাইয়ে ফের ‘দিল্লির দাদাগিরি’! বাদ পড়তে পারেন একাধিক বিধায়ক?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩৫: বিধানসভা নির্বাচনের ঢাঁক বাজতে আর কয়েক মাস বাকি। তার আগেই বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) অন্দরে প্রার্থীর টিকিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে জোর স্নায়ুযুদ্ধ। একুশের নির্বাচনের মতো এবারেও টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় কম নয়। রাজ্য দপ্তরে ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে বায়োডাটার পাহাড়। কিন্তু রাজ্য নেতাদের সুপারিশ বা ব্যক্তিগত আবেদনের ভিত্তিতে আদৌ কি শিকে ছিঁড়বে? দলের অন্দরের খবর কিন্তু অন্য কথা বলছে। শোনা যাচ্ছে, এবার প্রার্থী বাছাইয়ের সম্পূর্ণ রাশ নিজেদের হাতেই রাখছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সোজা কথায়, প্রার্থী তালিকায় এবারও চলবে ‘দিল্লির দাদাগিরি’।
সূত্রের খবর, ২৯৪টি বিধানসভা আসনের জন্য হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়লেও, অমিত শাহের দপ্তর সেই বায়োডাটা বা রাজ্য নেতাদের সুপারিশকে খুব একটা আমল দিচ্ছে না। পরিবর্তে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গোপন সমীক্ষাকে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন এজেন্সিকে দিয়ে রাজ্যের প্রতিটি আসনে গোপনে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি জমা পড়ছে শাহের দপ্তরে। বিধানসভা পিছু অন্তত তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসছে সেই রিপোর্টে। বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র যাদব ও বিপ্লব দেব রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালালেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকেই নেওয়া হবে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে (wb assembly election) দলবদলু এবং তারকা প্রার্থীদের ওপর ভরসা করে যে ভরাডুবি হয়েছিল, সেই শিক্ষা থেকে এবার সতর্ক গেরুয়া শিবির। এবার আর ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ দলবদলু বা শুধুই গ্ল্যামারাস তারকাদের ওপর বাজি ধরছে না দল। বরং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং দলের দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া কর্মীদের ওপর। এই ফর্মুলায় বর্তমান বিধায়কদের অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। শোনা যাচ্ছে, পারফরম্যান্সের বিচারে বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে অন্তত ১০-১৫ জনের টিকিট কাটা যেতে পারে। আবার অনেকের নির্বাচনী ক্ষেত্র বদল হওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু রদবদলের ইঙ্গিত মিলছে। নিজের গড় ভাটপাড়া থেকেই লড়তে পারেন অর্জুন সিং, সেক্ষেত্রে তাঁর পুত্রকে শিল্পাঞ্চলের অন্য আসনে সরানো হতে পারে। বারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে কৌস্তভ বাগচির নাম। অন্যদিকে উত্তর কলকাতার কোনও একটি আসনে তাপস রায় এবং বরানগরে সজল ঘোষের নাম উঠে আসছে। টিকিট পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো নেতারা। দিলীপ ঘোষ খড়গপুর থেকে লড়তে ইচ্ছুক হলেও, সেখানে বর্তমান বিধায়ক হিরণকে সরানো নাও হতে পারে। লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অমিতাভ চক্রবর্তীও নিজেদের পছন্দের বা নিরাপদ আসন খুঁজছেন।
সব মিলিয়ে, কে প্রার্থী হবেন আর কে বাদ পড়বেন, তা পুরোটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর। আর এখানেই দানা বাঁধছে বিতর্ক। বঙ্গ বিজেপির একাংশের মতে, বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যাদের নাড়ির টান নেই, সেই সব হিন্দিভাষী কেন্দ্রীয় নেতারা যদি প্রার্থী ঠিক করেন, তবে দলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়তে পারে। অতীতেও ‘দিল্লির দাদাগিরি’ নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। ভোটের মুখে প্রার্থী তালিকা নিয়ে এই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ সেই অসন্তোষকে আরও উসকে দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।