বার্সেলোনায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় একচালা দুর্গাপুজোয় এক হচ্ছে বিশ্ববাসী!

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:২০: বার্সেলোনা মানেই ফুটবল, ন্যু ক্যাম্প, লাল-নীল জার্সির টিকিটাকা। কিন্তু এই শহর এখন শুধু ফুটবলেই নয়, দুর্গাপুজোতেও এক হচ্ছে বিশ্ববাসী। কাতালোনিয়ার রাজধানীতে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় একচালা দুর্গাপুজো।
বার্সেলোনা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) উদ্যোগে ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। প্রথমে ছিল শোলার প্রতিমা, আয়োজনে ছিল সীমাবদ্ধতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০২৩ সালের স্পেন সফর প্রবাসী বাঙালিদের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে তোলে। আনুষ্ঠানিক রূপ পায় বিসিএ-র দুর্গাপুজো।
২০২৪-এ আড়ম্বর বাড়ে আরও কয়েক গুণ। কুমোরটুলি থেকে জাহাজে আনা হয় শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি সাড়ে দশ ফুট উঁচু ফাইবারের প্রতিমা। অর্ণব সরকার বললেন, “আমাদের মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী মিন্টু পাল। জাহাজে করে সেটা নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাদের মূর্তি সাড়ে দশ ফুট উঁচু। ইউরোপের আর কোথাও এত বড় একচালার প্রতিমায় পুজো হয় না।”
প্রথম দিকে শ্রেয়সী নাগের নাচের স্কুল ‘নূপুরা’য় হতো পুজো। এবার হচ্ছে আর্ক দে ট্রুম্পের এক আর্ট গ্যালারিতে, যেখানে অন্তত ২০০ মানুষের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার জায়গা আছে।
শুধু বাঙালি নন, ভারতীয়রাও আসেন এই উৎসবে। আর উপস্থিত থাকেন বহু বিদেশি। নিবিড় দাসের কথায়, “স্প্যানিশরা তো বটেই, অনেক দেশেরই মানুষ আসেন আমাদের পুজোয়। দশমীতে আমাদের সিঁদুর খেলা দেখে তো তাঁরা থ! লাল রঙের প্রতি বোধহয় ওঁদের একটা টান আছে। আমাদের সঙ্গে ওঁরাও সিঁদুর খেলতে শুরু করেন। আমরা যখন ঢাকের তালে ধুনুচি নাচছি, তখনও ওঁরাও চেষ্টা করছিলেন আমাদের সঙ্গে তাল মেলানোর। সে এক দেখার মতো দৃশ্য!”
অর্ণববাবু আরও যোগ করলেন, “ভেনেজুয়েলার এক ব্যক্তি গতবছর আমাদের পুজোয় এসেছিলেন। ঢাকের আওয়াজে তিনি মাতোয়ারা। দশ মিনিটের জন্য এসে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর তিনি ক্ষান্ত হন।”
বাঙালি খাঁটি আচার-অনুষ্ঠানই এই পুজোর প্রাণ। গান, নাচ, নাটক থেকে ভোগের খিচুড়ি, লাবড়া, মিষ্টি বা কচুরি-ছোলার ডাল- সবকিছু মিলে একেবারে বাংলার আমেজ। বিসর্জনের রীতিও বিশেষ- ফাইবার প্রতিমার পাশাপাশি ছোট একটি প্রতিমাকে জলে বিসর্জন দিয়ে সেই জলেই গাছ লাগানো হয়।
ভবিষ্যতে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে বিসিএ-র। বাংলা শেখানোর স্কুল, সমাজসেবামূলক কাজ, এমনকি কোনও দিন হয়তো বার্সেলোনার নামী ফুটবলারকেও দেখা যাবে অতিথি আসনে।
ফুটবলের মতোই বার্সেলোনার দুর্গাপুজো আজ ‘More than a club’। দূরদেশের মাটিতে মা দুর্গা যেন বাঙালি ও বিদেশিদের এক করে দিচ্ছেন একই উৎসবের সুরে।