Durga Puja 2025: কীভাবে শুরু হয়েছিল ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ির দুর্গাপুজো?

September 24, 2025 | 3 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৫০: ১৭৭০ সালে দুর্গাপুজো শুরু করেন রামদুলাল দে। সেকালের কলকাতার অন্যতম ধনী পরিবার ছিল দে পরিবার। তাঁদের বাড়ির নাম রামদুলাল নিবাস, লাল টুকটুকে এক বাড়ি। ব্যবসায়ী রামদুলাল অর্থ ও সম্মান দুই-ই অর্জন করেছিলেন। সুদূর পাশ্চাত্যেও তাঁর ব্যবসা চলত। হিন্দু কলেজ তৈরিতে এই রামদুলাল দে-ই সবচেয়ে বেশি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। রামদুলাল দে-র মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে আশুতোষ দে এবং প্রমথনাথ দে পরিবারের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেন। তাঁরাই ছাতুবাবু এবং লাটুবাবু নামে পরিচিত ছিলেন। কলকাতার বাবুকালচারের সঙ্গে এই দুটি নাম জড়িয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালে তাঁদের নামেই এই বাড়ির পুজো বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

এক্কালে এই বাড়ির পুজো দেখতে ভিড় জমত। পুজোর সময় যাত্রা হত, বাঈ নাচ হত। জুড়িগাড়ি আর পালকি ভিড় করে থাকত। মাতৃ প্রতিমার দুই পাশে পার্বতীর দুই সহচরী জয়া-বিজয়ার মূর্তি থাকে। রথের দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে এদের দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। মহালয়ার পর প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো। প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয়। এখানে মা দুর্গাকে দশমহাবিদ্যা রূপে পুজো করা হয়। প্রতিপদ থেকে পুজো শুরু হয়, যা চলে দশ দিন ধরে। এখানে শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব তিনটি মতের মিলনে দেবীর আরাধনা করা হয়। বৃহৎ নান্দীকেশ্বর পুরাণ মেনে পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। সাবেকি একচালার ঠাকুর হয়। তবে চিরাচরিত পারিবারিক মায়ের রূপটি এখানে একটু অন্যরকম। এখানে প্রতিমার ডানদিকে মহাদেব ও বামে শ্রী রামচন্দ্র বিরাজ করেন। তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয়। পুরাণের বিধি মেনে শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। এই বাড়ির পুজোয় দেবীর পাশে লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকেন না। পদ্মের উপর থাকেন জয়া আর বিজয়া। মা দুর্গার দুই সখী। একদা পুজোর সময় পাঁঠাবলি হত। একবার বলি দেওয়ার সময় বলির জন্যে আনা পাঁঠাটি প্রাণ বাঁচাতে ছুটে রামদুলাল দে-র কাছে চলে আসে। সেই থেকে এই পাঁঠাবলি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পুজোর তিন দিন আঁখ, চালকুমড়ো, শসা বলি হয়।

 

এই বাড়িতে কুমারী পুজোও হয়। এই বাড়িতে অন্নভোগ হয় না। ঠাকুরকে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। দেবীর সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চদেবতা নবগ্রহ এবং ৬৪ দেবদেবীর পুজো হয়। আগে এই বাড়ির ভোগ ছিল দেখার মতো। ঠাকুরকে বিরাট আকার আয়তনের শিঙারা, নিমকি লেডিকেনিসহ ৬ রকমের নোনতা-মিষ্টি খাবার নিবেদন করা হত। পরে তাইই প্রসাদ হিসেবে দর্শনার্থী এবং নিমন্ত্রিতদের মধ্যে বিতরণ করা হত। এখন দে বাড়ির পুজোয় ঠাকুরের ভোগের জন্যই বড় বড় মিষ্টি তৈরি হয়। এইদিন লুচি তরকারি ছাড়াও লেডিকেনি ও দরবেশ ভোগ দেওয়া হয় মা দুর্গাকে। এছাড়া অন্যদিন পঞ্চদেবতা, নবগ্রহ, ৬৪ দেবদেবী ও মা দুর্গাকে নিয়ে মোট ৭৯টি নৈবেদ্য প্রস্তুত করা হয়। অন্নভোগও দেওয়া হয়ে থাকে। অষ্টমীর দিন বাড়িতে মহাভোজের আয়োজন করা হয়। আত্মীয় পরিজন মিলিয়ে প্রচুর মানুষ নিমন্ত্রিত হন। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর প্রচলন আছে বাড়িতে। অষ্টমী পুজোর পরে বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলেন। এটাই এদের রেওয়াজ। এই বাড়িতে আজও পুজোর পোশাক শুধুই শাড়ি ও ধুতি। ওই কটা দিন পরিবারের লোকেরা অন্য পোশাক পরেন না।

 

 

 

দশমীতে প্রথমে ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। তারপর দেবীকে অপরাজিতা রূপে পুজো করা হয়। সব বনেদি বাড়ির মতো এই বাড়িতেও আগে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে কৈলাসে মহাদেবকে দেবীর ফেরার বার্তা পাঠানো হত। কিন্তু বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ফলে নীলকণ্ঠ পাখি আর ওড়ানো হয় না। সাদা পায়রার গলায় নীল রঙ করে ঠাকুর বিসর্জনের সময় উড়িয়ে দেওয়া হয়। জোড়া নৌকায় ঠাকুর বিসর্জনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আগে বিসর্জনের সময় এই বাড়িতে ঠাকুরকে দুই নৌকার মাঝে দোলনার মতো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। মাঝগঙ্গায় গিয়ে দোলনার দড়ি আলগা করে ঠাকুরকে বিসর্জন দেওয়া হত। সে প্রথা আজ বিলুপ্ত। তবে প্রতিমা বিসর্জনের আগে কনকাঞ্জলি দেওয়ার প্রথা আজও রয়ে গিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen