শান্তিপুরের রায়বাড়িতে তৃষ্ণা নিবারণ করতে এসেছিলেন স্বয়ং দেবী দুর্গা

গৌড়বঙ্গের জমিদার ছিলেন শান্তিপুরের রায়রা। গৃহদেবতা গৌরহরিকে নিয়ে জমিদারির মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে আসেন চাঁদ রায় এবং তাঁর ভাই গৌরচন্দ্র রায়।

September 28, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভাদ্রের শেষ তবুও দাপট ছিল গরমের। বাড়ির কর্ত্রী কাজ সারছিলেন। লালপাড় শাড়ি পরা এক মহিলা ঢুকে এলেন ঘরে, জিজ্ঞাসা করলেন ‘একটু জল দিবি মা।’ এগিয়ে দিয়েছিলেন জল। ঢক ঢক করে জল খেয়ে মহিলা বেরিয়ে যাওয়ার পথে গৃহকর্ত্রীকে বললেন, ‘আমি আসি রে। বাইরের ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করছে।’ কোনও সাধারণ মহিলা নন, সাধারণের বেশে এসেছিলেন মা দুর্গা। পরে তিনিই গৃহকর্ত্রীকে নির্দেশ দেন দুর্গাপুজোর। রায়বাড়ির পুজোর এভাবেই সূচনা হয়েছিল। পুজোর বয়স সাড়ে পাঁচশো বছর।

গৌড়বঙ্গের জমিদার ছিলেন শান্তিপুরের রায়রা। গৃহদেবতা গৌরহরিকে নিয়ে জমিদারির মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে আসেন চাঁদ রায় এবং তাঁর ভাই গৌরচন্দ্র রায়। আত্মগোপন করেন বাঁশবেড়িয়ায়। গুপ্তিপাড়া হয়ে গঙ্গা পার করে নদীয়ার বাঘআছড়া, তারপর শান্তিপুরে এসে বসবাস শুরু করেন চাঁদ এবং গৌর। আর্থিক অনটনে শুরু হয় দিনগুজরান। কিছু বছর পর রায়বাড়ির দেউড়ি পেরিয়ে প্রবেশ করেছিলেন দেবী দুর্গা। সেই রাতে গৃহকর্ত্রী স্বপ্ন দেখেন, দেবী তাঁকে বলছেন, আমি তোর বাড়ি এলাম। তুই আমার চিনতেই পারলি না? এ বছর থেকেই তুই আমার পুজো কর। কল্যাণ হবে তোদের।

স্বপ্নেই ওই গৃহকর্ত্রী বলে ওঠেন, আর্থিক অনটনে দু’বেলা হাঁড়ি চড়ে না। এত বড় পুজো, এত কম সময়ে হবে কী করে? শোনা যায়, দেবীর নিদানে প্রথম বছর কুলোয় ছবি এঁকেই আয়োজন করা হয় পুজোর। আজ পর্যন্ত নিয়মিত শান্তিপুরের দত্তপাড়ার রায়বাড়িতে হয়ে চলেছে দেবী দুর্গার আরাধনা। দেবী দুর্গার পুজো হলেও সঙ্গে থাকেন না লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী অথবা কার্তিক। যেহেতু ওই ঘটনার দিন দেবী একাই বাড়িতে ঢুকেছিলেন। তাই পুজোয় কেবল দুর্গা, অসুর আর সিংহ থাকেন। নবপত্রিকা থাকে।

দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার পর থেকে অবস্থা ফিরতে থাকে রায়দের। তারা শান্তিপুরের অন্যতম প্রধান জমিদার হয়ে ওঠে। শাক্তমতেই পুজো হয় রায়বাড়িতে। প্রাণী বলির প্রচলন কোনওকালেই ছিল না। এই বাড়িতে ফল বলি হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen