ভোটার কার্ডে বাবার নামের বদলে শ্বশুরের নাম! নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে আত্মঘাতী আউশগ্রামের প্রৌঢ়
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:১০: ভোটার কার্ডে বাবার নামের জায়গায় ভুল করে চলে এসেছিল শ্বশুরের নাম। বার বার আবেদন করেও সেই ভুল সংশোধন হয়নি। সদ্য প্রকাশিত খসড়া তালিকায় সেই একই ভুল দেখে আর আতঙ্ক সামলাতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কল্যাণপুরের বাসিন্দা ভাস্কর মুখোপাধ্যায় (৫৩)। পরিবারের দাবি, নাগরিকত্ব হারানো ও ‘অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া’র ভয়েই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি হুগলির চন্দননগরে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি আউশগ্রামের কল্যাণপুরেই বসবাস করছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, একটি সামান্য করণিক ভুলই কাল হলো ভাস্করের জীবনে।
মৃতের ছেলে উল্লাস মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁর দাদুর নাম (ভাস্করের বাবা) পঞ্চানন মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ভোটার কার্ডে বাবার নামের জায়গায় ভুলবশত ‘সুবিমল মুখোপাধ্যায়’ নামটি চলে আসে, যা ভাস্করের শ্বশুরের নাম। উল্লাস বলেন, “বাবা খুব ভয়ে ছিলেন। চারদিকে যা পরিস্থিতি, অনেকেই বলছিল নাম ভুল থাকলে নাকি অন্য দেশে পাঠিয়ে দেবে। খসড়া তালিকাতেও ভুল নাম আসায় বাবা আরও ভেঙে পড়েন। শুনানিতে ডাকলে কী বলবেন, কী করবেন-সেই আতঙ্কেই বাবা আত্মঘাতী হলেন।”
মৃতের ভাই আশিস মুখোপাধ্যায়ও দাদাকে হারিয়ে প্রশাসনের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি জানান, ২০০২ সালের এসআইআর (SIR)-এ বাড়ির কারও নাম ছিল না। সেই নিয়ে পরিবারে আগে থেকেই একটা দুশ্চিন্তা ছিল। তার ওপর ভোটার কার্ডে বাবার নামের এই বিভ্রাট। আশিসবাবু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “একবার নয়, চার-চারবার দরখাস্ত করেও নাম সংশোধন করা যায়নি। প্রতিবারই বাবার নামের জায়গায় শ্বশুরের নাম চলে আসছিল। প্রশাসনিক জটিলতা আর আতঙ্কেই দাদা নিজেকে শেষ করে দিলেন।”
ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আউশগ্রাম থানার পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কেন এই ভুল সংশোধন হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।