সামনে নির্বাচন, তবুও বাজেটে বঞ্চিত বাংলা
এবারও প্রতীকী কিছু ঘোষণায় দায় সারল কেন্দ্র।

বছরে আটটি বাজেট(Budget)। বাংলার(West Bengal) প্রাপ্তি নগণ্য! বিধানসভা নির্বাচন আসছে। আশা করা হয়েছিল, রাজ্য দখলে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) অন্তত ২০২১ সালের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গকে দেবেন একঝাঁক ভোট উপহার। কিন্তু এবারও প্রতীকী কিছু ঘোষণায় দায় সারল কেন্দ্র।বঞ্চিতই থেকে গেল বাংলা। উপরন্তু সেস(Cess) চাপানোর নামে মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকলে কোপ পড়ল মধ্যবিত্তের পকেটে।
কেরল, তামিলনাড়ু, অসম ও পশ্চিমবঙ্গে এবার একসঙ্গে ভোট। তাই এই চার রাজ্যকে একই মডেলে কিছু পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প সোমবার উপহার দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন(Nirmala Sitharaman)। যাকে বলা যেতে পারে ভোটের কোটা। কিন্তু সেই তালিকাতেও বাংলা পিছনের সারিতে। হাইওয়ে প্রকল্পে তামিলনাড়ু পেয়েছে ১ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকার বিপুল বরাদ্দ। ৩,৫০০ কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ তো হবেই, সঙ্গে দু’টি নতুন হাইওয়ে করিডর। কেরলে ১,১০০ কিমি রাস্তা ও নতুন হাইওয়ে করিডরের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেশী রাজ্য অসমের জন্য দু’দফায় বরাদ্দ ৫৩ হাজার কোটি টাকার ১,৩০০ কিমি জাতীয় সড়ক। অথচ এই ফর্মুলায় ভোট-রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কপালে জুটেছে ২৫ হাজার কোটি টাকায় ৬৭৫ কিমি কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উন্নয়ন। কলকাতা মেট্রোর জন্য নতুন ঘোষণা নেই। বরাদ্দ গত বছরের থেকে মাত্র ২০০ কোটি বাড়িয়ে ৯০০ কোটি টাকা। খড়্গপুর থেকে ভুশওয়াল এবং খড়্গপুর থেকে বিজয়ওয়াড়া—নতুন দু’টি ফ্রেট করিডর গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু পূর্ব ঘোষিত ইস্টার্ন ফ্রেট করিডরে কলকাতা কবে যুক্ত হবে, সেটাই অনিশ্চিত। কারণ, বাজেটে বলা হয়েছে, গোমো থেকে ডানকুনি ফ্রেট করিডর হবে পিপিপি মডেলে। অসম ও বাংলার চা বাগানের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। অমিত শাহ বারংবার পশ্চিমবঙ্গে এসে বলেছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে সোনার বাংলা হবে। তাই আশা করা হয়েছিল, এবার মহড়া হিসেবে কর্মসংস্থান, নতুন শিল্প অথবা উৎপাদন ইউনিট চালুর ঘোষণা হবে বাজেটে। সেরকম কিছুই পাওয়া যায়নি।
কোভিড পরবর্তী সময়ে গোটা দেশ চেয়েছিল সাশ্রয়ের সন্ধান। কিন্তু উল্টে বাজেটে নতুন একটি সেস বলবৎ করে আর্থিক বোঝা চাপানো হল। সোনা-রুপো থেকে পেট্রল-ডিজেল এবং অন্য একঝাঁক পণ্যের উপর বসছে কৃষি পরিকাঠামো সেস। যেমন পেট্রলে লিটার পিছু আড়াই টাকা এবং ডিজেলে চার টাকা সেস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, কয়েকটি পণ্যে সেস চেপেছে ঠিকই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি শুল্ক কমানোও হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের উপর বোঝা চাপবে না। তবে বহু প্রত্যাশিত আয়কর ছাড় এবারও জুটল না। ৭৫ বছর বয়সিদের জমা টাকার সুদ ও পেনশন বাবদ কর দিতে হলে আয়কর রিটার্ন জমা করতে হবে না—প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। আবার প্রভিডেন্ট ফান্ডে বছরে আড়াই লক্ষ টাকা জমা দিলে প্রাপ্ত সুদের উপর কর চাপবে।
কোভিড ও লকডাউনে দীর্ণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য কী আছে এই বাজেটে? উত্তর প্রধানত তিনটি। ১) পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্য খাতে বিপুল বরাদ্দ। রাস্তা, রেল, বন্দর নির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ফিরিয়ে আনা। শুধু ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। ২) স্বাস্থ্য খাতে পৃথক বাজেট করে চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য ভারত যোজনা নামক নতুন প্রকল্প। যার লক্ষ্য, বেসরকারি লগ্নি। বরাদ্দ ২ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ৩) ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, সরকারি জমি বিক্রি করে তহবিল নির্মাণ। সরকারি সংস্থা বিক্রি করে চলতি অর্থবর্ষে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে এবার ৩৪ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ব্যয় ধার্য করা হয়েছে। আর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২২ লক্ষ কোটি টাকা। ১২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা। ৯.৫ শতাংশ আর্থিক ঘাটতি। মাইনাস ৭ হবে জিডিপি হার। ৭২ বছরে সর্বোচ্চ মন্দা। সুতরাং, কমাতে হবে রাজস্ব ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং জিডিপি সঙ্কোচন। দিতে হবে কাজ। আনতে হবে লগ্নিও। একটি বাজেট, একঝাঁক কঠিন টার্গেট! ২০২২ সাল মোদির সম্মান রক্ষার চ্যালেঞ্জ। আর্থিকভাবে শক্তিশালী ভারতের ছবি দেখাতেই হবে মোদিকে। কেন? কারণ, আগামী বছর স্বাধীনতা ৭৫!