বঙ্গে ভোটের প্রস্তুতি শুরু! SIR নিয়ে রাজারহাট ও বারাসতে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল

নিউজ ডেস্ক , দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:৪৪: বিহারে ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এ বার নজরে বাংলা। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনী প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে পৌঁছেছেন নির্বাচন কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মনোজ আগরওয়াল এবং আরও দুই শীর্ষ আধিকারিক। সূত্রের খবর, বিহারে সফর সেরে এবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে SIR (Special Investigation Report) সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যালোচনার লক্ষ্যেই এই সফর।
বুধবার বিকেলে প্রতিনিধি দল রাজারহাটের সত্যজিৎ রায় ভবনে পৌঁছান। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দফার বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদীও। বৈঠকে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভোট পরিচালনার রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
প্রতিনিধি দলের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বারাসতে। সেখানে জেলার অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন কমিশনের সদস্যরা। নির্বাচন কমিশনের এই সফরকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলে তৎপরতা বেড়েছে।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কোলাঘাট অডিটোরিয়ামে পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার অংশ হিসেবে এই বৈঠকে প্রশাসনিক স্তরে নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
সব মিলিয়ে SIR (Special Investigation Report) সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে বাংলায় ভোটের দামামা কার্যত বেজে উঠেছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোট সংক্রান্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্য আরও বৈঠক হতে পারে।
বুধবার রাজারহাটের সত্যজিৎ রায় ভবনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসার আগেই উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়। যাত্রাগাছি, গৌরাঙ্গনগর ও বাগুইআটি এলাকার বহু বাসিন্দা প্ল্যাকার্ড হাতে ভবনের মূল গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমরা ভারতবর্ষের নাগরিক। আমাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেবেন না প্লিজ!’ জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্য।
হাতে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড নিয়ে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অবস্থান জানান। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করলেও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বুধবার রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠকে বসেন কমিশনের আধিকারিকরা। সেই বৈঠকেই আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেন তাঁরা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপনির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, তথ্যপ্রযুক্তি শাখার ডিরেক্টর জেনারেল সীমা খান্না, কমিশনের সচিব এসবি যোশী এবং উপসচিব অভিনব আগরওয়াল। তবে উত্তরবঙ্গের বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠকে থাকতে পারেননি। সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলায় এসআইআর প্রস্তুতির অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন কমিশনের আধিকারিকরা এবং দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি ভোটার তালিকার এনুমারেশন ফর্ম মুদ্রণের প্রস্তুতিও এখন থেকেই সেরে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বাংলায় মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬৫ কোটি। প্রত্যেক ভোটারকে দেওয়া হবে দুটি ফর্ম—একটি বিএলও জমা নেবেন, আরেকটি থাকবে ভোটারের কাছে। ফলে মোট প্রয়োজন অন্তত ১৫ কোটি ফর্ম। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিল্লি থেকে সফট কপি পাঠানো হবে প্রতিটি জেলায়, আর সেই ফর্ম ছাপানোর দায়িত্ব থাকবে জেলা প্রশাসনের উপর। নির্দেশ অনুযায়ী, এসআইআর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪-৫ দিনের মধ্যেই অন্তত ৩০ শতাংশ ফর্ম ছাপানোর কাজ শেষ করতে হবে।