‘বই পড়ে না কেউ’ ধারণার ইতি : শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় ৩৫ লক্ষ টাকার বই বিক্রি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:১৫: ডিজিটাল পর্দা আর দ্রুতগতির কনটেন্টের ভিড়ে বই যে আজও পাঠকের মন ছুঁতে পারে, তার স্পষ্ট প্রমাণ মিলল শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলায়। প্রযুক্তির যুগে বইয়ের বাজার মন্দা—এমন অভিযোগ যখন সর্বত্র, ঠিক তখনই এই মেলা ভেঙে দিল বহু প্রচলিত ধারণা।
এবছর পৌষমেলায় মোট ১২টি স্টল থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মূলত হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের জন্য পরিচিত এই মেলাতেই বই বিপণনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেল একাধিক প্রকাশনা সংস্থা। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ। মাত্র ছয় দিনের মেলায় তাদের স্টল থেকেই বিক্রি হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকারও বেশি বই। পাঠকদের সুবিধার্থে কিউআর কোড স্ক্যান করে বইয়ের তালিকা দেখার ব্যবস্থাও ছিল, যা নতুন প্রজন্মের পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো। উন্নত মানের কাগজ, নির্ভুল বানান, পরিষ্কার হরফ ও গাঢ় খয়েরি রঙের রেক্সিন বাঁধাই—এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্বভারতী প্রকাশনার বইকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে। গ্রন্থন বিভাগ থেকে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের ১৮ খণ্ডের সংকলন বিপুল সংখ্যক পর্যটক কিনেছেন, পাশাপাশি প্রায় ৫৫০ জন আগাম অর্ডারও দিয়েছেন। কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, ‘গীতাঞ্জলি’র বিভিন্ন ভাষার অনুবাদ, ‘গীতবিতান’, ‘স্বরবিতান’ এবং রবীন্দ্রসপ্তাহের বক্তৃতা সংকলনের চাহিদাও ছিল যথেষ্ট।
রাজনৈতিক দলগুলির স্টলেও বই বিক্রি কম হয়নি। সিপিএম, এসএফআই ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্টলে নানা রাজনৈতিক ও সমসাময়িক গ্রন্থ পাঠকদের আগ্রহ কাড়ে। পাশাপাশি ডুংরি প্রকাশনার পূর্ব বাংলা, গণআন্দোলন ও শেখ মুজিব বিষয়ক বইও ভালো সাড়া পায়। সৈকত রক্ষিতের ‘বৃংহন’, ‘জেরুজালেমের যাত্রী’ এবং ‘নাবিকালীর রিস্কা’ পাঠকমহলে বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
সব মিলিয়ে, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা দেখিয়ে দিল—স্ক্রিনের যুগেও বইয়ের আবেদন ফুরোয়নি। পাঠকের হাতে ছাপার অক্ষর আজও সমানভাবে জীবন্ত ও প্রাসঙ্গিক।