ভ্যাক্সিন পাওয়া সকলের অধিকারঃ তৃণমূল
গত ৭ই অক্টোবর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের যে পরিসংখ্যান বেরিয়েছে, তাতে ভারতের স্থান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নীচে হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আজ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প এবং সাফল্যের পরিসংখ্যান নিয়ে তৃণমূল ভবনে (Trinamool Bhavan) সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূল সাংসদ ডঃ শান্তনু সেন (Shantanu Sen)। আজকের যুগেও কেন্দ্রীয় সরকার যে রাজস্বের মাত্র ১.৩ শতাংশ দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে, তার নিন্দা করেন তিনি। গত ৭ই অক্টোবর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের যে পরিসংখ্যান বেরিয়েছে, তাতে ভারতের স্থান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নীচে হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজ্যে ২০১০ সালে স্বাস্থ্যের বাজেট ছিল ৩,৪৪২ কোটি টাকা যা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ১১,২৮০ কোটি টাকা। হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। ডাক্তার বেড়েছে ২১৯ শতাংশ, নার্স বেড়েছে ৫.৪ শতাংশ। এর পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ যা ছিল ১০টি, তা বেড়ে হয়েছে ১৮টি। মেডিক্যালে আসন সংখ্যা ছিল ১৩৫৫। যা বেড়ে হয়েছে ৪০০০। শিশুমৃত্যুর হার যা ছিল ৩২, তা কমে হয়েছে ২২। মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১১৭। কমে হয়েছে ৯৮। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৬৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮.৫। এছাড়া বাংলাই দেশের একমাত্র রাজ্য যেখানে সরকারি চিকিৎসা মেলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
এরপর তিনি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হওয়া বাংলার নিজস্ব প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী ও কেন্দ্রের অনুকরণ করা বিজ্ঞাপন সর্বস্ব আয়ুষ্মান ভারতের তুলনা করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত বাংলা গ্রহন করলে মাত্র ১.১২ কোটি পরিবার এর আওতায় পড়তো। সেখানে বাংলায় স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় পড়ে ১.৫ কোটি পরিবার। স্বাস্থ্যসাথী সম্পূর্ণ পেপারলেস এবং স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পরিষেবা মেলে। সেখানে আয়ুষ্মান ভারতে প্রিন্ট আউট করতে লাগে ৩০টাকা করে। তিনি বলেন, মহিলাদের সম্মান জানাতে ও সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জারি করা হয় পরিবারের সবথেকে বয়স্কা মহিলার নামে। এই কার্ডের ফলে ঐ মহিলার বাপের ও শ্বশুরবাড়ির সকলেই স্বাস্থ্য পরিষেবা পান।
স্বাস্থ্যসাথীর প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন আয়ুষ্মান ভারতে মাত্র ১৩০০ রকমের রোগের চিকিৎসা মিলবে। সেখানে স্বাস্থ্যসাথীতে কসমেটিক সার্জারি ছাড়া সমস্ত রোগের চিকিৎসা মেলে। যেখানে আয়ুষ্মান ভারতে ক্লেম সেটেল হচ্ছে না, সেখানে স্বাস্থ্যসাথীতে ৩০ দিনের মধ্যে ক্লেম সেটেল না হলে ১.৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয় রোগীকে। স্বাস্থ্যসাথীর সম্পূর্ণ খরচ বহন করে রাজ্য। সেখানে আয়ুষ্মান ভারতে ৪০ শতাংশ ভর্তুকি গুন্তে হবে রাজ্যকে। দুয়ারে সরকার উদ্যোগের ফলে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজ্যের ১০কোটি মানুশকেই স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনার। এর ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়ে হবে ২০০০ কোটি টাকা। সেখানে আয়ুষ্মান ভারতের বাজেটের ৫০ শতাংশও তারা খরচ করতে পারেনি।
কোভিড (Covid 19) মোকাবিলার কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও অপদার্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০শে জানুয়ারি কেরলে যখন দেশের প্রথম কোভিড আক্রান্ত ধরা পড়ে, তখন ২৪ ও ২৫শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটে নমস্তে ট্রাম্প ও মধ্যপ্রদেশ সরকার গঠনের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্র। রাজ্যসভায় মাস্ক পরে যাওয়ায় তৃণমূল সাংসদদের বহিস্কার করা হয় ফ্লোর থেকে। যখন ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে করোনা ছড়িয়ে গেছে, তখন ৫ই ফেব্রুয়ারি চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়।
গ্রামীণ এলাকায় করোনা ছড়ানো নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিকে গ্রামাঞ্চলে এই রোগ ছড়ায় নি। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর তোয়াক্কা না করে, কোনও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে ২১শে মার্চ লকডাউন ঘোষণা করার ফলে পরিযায়ীদের বিপদে ফেলা হয়। তাদের এক কোথায় নিজের রাজ্যে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাড়ানো হয়। তাদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা ছিল না। ট্রেনের ভাড়াও দেওয়া হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র ট্রেন ও বাস ভাড়া করে পরিযায়ী শ্রমিক ও পরিযায়ীদের ফিরিয়ে এনেছিলেন। ৭৫০ জন পরিযায়ী পথ দুর্ঘটনায় মারা যান।
কোভিডের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই কিটের কাঁচামাল ১৯শে মার্চ পর্যন্ত রপ্তানি করেছে ভারত। দেড় মাস অর্ডার দেয়নি। যেখানে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩.৮ কোটি পিপিই কিট। সেখানে যোগান ছিল মাত্র ৯০ লক্ষের। রাজ্যগুলোকে টেস্টিং কিট তৈরি করতে দিচ্ছিল না। একতরফা নির্দেশিকা পাঠানো শুরু হল রাজ্যে। প্রতিদিন ১লক্ষ কেসের পরেও আইসিএমআর কমিউনিটি স্প্রেড বলেনি।
কোভিড ভ্যাক্সিনের অপারেশনল গাইডলাইনে বলা হয়েছে ভোটার লিস্টের ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে। প্রত্যেক মানুষের ভ্যাক্সিন পাওয়ার অধিকার আছে। ভোটার লিস্টে নাম না থাকলে সে ভ্যাক্সিন পাবে না? রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কোভিড মোকাবিলায় ৫০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।