প্রয়াত জঙ্গলমহলের দাপুটে বাম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন্দ্র কিস্কু
Authored By:
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:০০: জঙ্গলমহলের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী, প্রবীণ বাম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন্দ্র কিস্কু (Upendra Kisku) প্রয়াত। বুধবার রাতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাঁকুড়া তথা জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক মহলে। বৃহস্পতিবার শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিপিএম-এর (CPM) বাঁকুড়া জেলা কার্যালয়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট পান বর্ষীয়ান এই নেতা। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় তাঁকে দ্রুত বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক উপেন্দ্র কিস্কুর রাজনৈতিক উত্থান ছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সত্তরের দশকে জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। বিশেষ করে কেন্দু পাতা সংগ্রহ ও বিক্রির ন্যায্য মূল্য এবং বিড়ি শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক ‘কেন্দু পাতা আন্দোলন’-এর অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। এই আন্দোলনের সাফল্যের জেরে তিনি জঙ্গলমহলে বামপন্থীদের এক জনপ্রিয় ও দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন।
১৯৭৭ সালে বাঁকুড়ার রাইপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। এরপর টানা আটবার ওই কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হয়ে বিধানসভায় গিয়েছেন। ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। ২০১১ সালে রাজ্যে যখন পালাবদলের হাওয়া, তখনও নিজের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়তে দেননি উপেন্দ্রবাবু। সেবারও রাইপুর থেকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন।
জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে বহু সরকারি স্কুল ও আদিবাসী সমবায় তাঁর উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন ‘আদিবাসী অধিকার মঞ্চ’ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। ২০১৬ সালের পর প্রত্যক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও, শেষদিন পর্যন্ত দলের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান ছিল অটুট।