ভোটার তালিকা সংশোধনে প্রবীণদের চরম হয়রানি ও BLA-দের বাধা, কমিশনের দপ্তরে ক্ষোভ তৃণমূলের

December 29, 2025 | 2 min read

Authored By:

Saikat Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:১১: ভোটার তালিকা সংশোধন বা নাম তোলার ‘হিয়ারিং’-এর নামে সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের চরম হয়রানি করা হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ তুলে সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (CEO) দপ্তরে দরবার করল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। দলের ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল এদিন সিইও-র (CEO) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick), শশী পাঁজা (Shashi Panja), বাপি হালদার (Bapi Haldar), পুলক রায় (Pulak Roy) এবং বীরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hansda)।

বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) ভূমিকা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলেন। তৃণমূলের মূল অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও তারা কেন্দ্রীয় সরকারের (Central government) বা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের (BJP) হয়ে কাজ করছে। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, “নির্বাচন কমিশন যেন বিজেপি পার্টি অফিসে পরিণত না হয়। কমিশন সারা ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।”

তৃণমূলের প্রতিনিধি দল অভিযোগ করে যে, ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ নাগরিক (Senior citizen) এবং বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সশরীরে হিয়ারিং-এ ডাকা হচ্ছে, যা অমানবিক। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা জানান, হাওড়ায় ৯২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এবং গারুলিয়ায় ৯৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে তলব করা হয়েছে। পার্থ ভৌমিক দাবি করেন, পুরুলিয়ার পাড়া বিধানসভায় হিয়ারিংয়ের নোটিশ পেয়ে আতঙ্কে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ভোটের সময় যারা বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার সুবিধা পান, তাঁদের কেন এই কষ্টের মধ্যে ফেলা হচ্ছে?

কর্মসূত্রে বা উচ্চশিক্ষার জন্য যারা ভিন রাজ্যে বা বিদেশে রয়েছেন, তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)- সকলেই যদি ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন, তবে ভোটার তালিকার হিয়ারিং কেন ভার্চুয়ালি হবে না? সামান্য একটি হিয়ারিংয়ের জন্য বিদেশ বা ভিন রাজ্য থেকে বিপুল খরচ করে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তাই প্রবাসী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে ভার্চুয়াল হিয়ারিং চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।

হিয়ারিং চলাকালীন বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA-2) ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের যুক্তি, বাড়ি বাড়ি সার্ভে বা ভোটের দিন যদি রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা থাকতে পারেন, তবে হিয়ারিংয়ে কেন সব দলের এজেন্ট থাকতে পারবেন না? চুঁচুড়ায় বিধায়ক অসিত মজুমদারের হিয়ারিং বন্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার স্বার্থেই মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবাদ করেছেন। যদি কমিশন বিএলএ-দের (BLA) আটকাতে চায়, তবে লিখিত অর্ডার দেখাক।

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (Voter list 2002) যাদের নাম আছে, তাদের নতুন করে হিয়ারিং-এ (Hearing) ডাকার কথা নয়, অথচ সেটি মানা হচ্ছে না। সিইও (CEO) আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি নিয়ে দিল্লির নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং তালিকা প্রকাশের অসঙ্গতি নিয়ে খোঁজ নেবেন।

তবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল হুঁশিয়ারি দিয়েছে, মঙ্গলবারের মধ্যে যদি সিইও-র কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া যায়, তবে তাঁরা ফের বিকেল তিনটেয় কমিশনের দপ্তরে আসবেন। প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় আইনি লড়াইয়ের পথে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen