খসড়া ভোটার তালিকায় চূড়ান্ত বিভ্রাট: জীবিত ‘মৃত’, নামের বানানে ভিনগ্রহের ভাষা! বিড়ম্বনায় আমজনতা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:০০: জীবিত মানুষ খাতায়-কলমে বেমালুম ‘মৃত’! কারও বাবার সঙ্গে ছেলের বয়সের ফারাক মাত্র এক বছর, আবার কারও নামের বানান এমন দাঁড়িয়েছে যা উচ্চারণ করতে গিয়ে দাঁত ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা (SIR 2026) জুড়ে এমনই ভুরি ভুরি ভুলে মাথায় হাত সাধারণ মানুষের। বাঁকুড়া থেকে শুরু করে গোটা রাজ্য- ছবিটা কমবেশি একই।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা বিশ্বরূপ গোস্বামীর পরিবারের অভিজ্ঞতা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজনেরই নামের বানানে অদ্ভুত সব ভুল। আধার কার্ড (Aadhar card) বা পুরনো ভোটার কার্ডে (voter card) সব তথ্য সঠিক থাকা সত্ত্বেও খসড়া তালিকায় সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। বিশ্বরূপবাবুর নামের বানান ‘Bishwarup’-এর বদলে হয়েছে ‘Bishbarup’। তাঁর স্ত্রী শাশ্বতীর নাম ‘Shaswati’ থেকে বদলে হয়েছে ‘Shbasbati’। শুধু তাই নয়, নামের শুরুতে ক্যাপিটাল লেটারের বদলে কোথাও স্মল লেটার, আবার শব্দের মাঝে হঠাৎ ক্যাপিটাল লেটার ঢুকে এক জগাখিচুড়ি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষুব্ধ বিশ্বরূপ গোস্বামী বলেন, “আমাদের আগের ভোটার কার্ডে সব তথ্য ঠিক ছিল। এত দেখে ফর্ম ফিলআপ করার পরেও কেন এই ভুল আসবে? ইলেকশন কমিশন কী করতে চাইছে কে জানে! এখন ভুল শুধরাতে আমাদেরই আবার বিএলও থেকে বিডিও অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। ফর্ম ৮ ফিলআপ করার ঝক্কি আবার আমাদের ওপরেই চাপানো হলো।”
শুধু গোস্বামী পরিবারই নয়, রাজ্যের বহু ভোটার এই সমস্যার সম্মুখীন। কোথাও জীবিত ভোটারকে মৃত দেখানো হয়েছে, আবার কোথাও লিঙ্গ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বিষ্ণুপুর বিধানসভা (Bishnupur Assembly) কেন্দ্রের ১৩৯ নম্বর বুথের ভোটারদের একাংশের অভিযোগ, এই ভুলের দায় নির্বাচন কমিশন (Election Commission) বা প্রশাসনের কেউ নিচ্ছেন না। ভুল সংশোধনের জন্য সাধারণ মানুষকেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএলও তাপস প্রতিহার বলেন, “বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, ডেটা এন্ট্রির সময় আমাদের নাম টাইপ করার কোনও অপশন দেওয়া হয়নি। সফটওয়্যার বা ওপর মহল থেকে যা এসেছে, সেটাই তালিকায় প্রতিফলিত হয়েছে।”
অন্যদিকে, বিএলও-রা ব্যক্তিগত স্তরে দাবি করছেন, অত্যধিক কাজের চাপের ফলেই এই বিপত্তি। তাঁদের কথায়, “আমাদের যা চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, তাতে এটুকু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে।” যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ ভুক্তভোগীরা। এই বিভ্রাট নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। শাসকদলের দাবি, “দু’বছরের কাজ জোর করে দু’মাসে করতে গেলে যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”