ফার্স্ট পার্সন – ঋতুপর্ণর কলমে বাঙালির জীবনদর্শন 

চলচিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের যে ব্যক্তিগত জীবন, সে অংশ নিয়ে বাঙালির আজীবনের কৌতুহল

August 31, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ফার্স্ট পার্সন ঋতুর নিরাভরণ অন্তরমহলের অবারিত আলাপন। তাঁর ভাষাতে বললে, “এই ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর পাতাটা আমার সত্যি কথা লেখার পাতা, আমার জীবনধারণের সমস্ত সত্যি বিশ্বাসকে মেলে ধরার পাতা।”

রোববারের পাতায় প্রায় সাতবছর ধরে উত্তম পুরুষে লেখা ঋতুপর্ণের এই আত্মকথন মৃত্যুর পরে বেরোয় দেজ পাবলিশিং থেকে। আয়তনের স্ফীতিতে ভাগ করা হয়েছে দু’খণ্ডে, বারোটি অধ্যায়ে।

সাপ্তাহিক কলমকারির এই একান্ত আলাপে কখনো এসেছে সিঙ্গুর, সিপিএম, ইস্টবেঙ্গলের হারজিত বা জ্যোতিবসুর প্রয়াণ, এসেছেন তসলিমা নাসরিন, দিল্লির নি‌র্ভয়া, বাবরি মসজিদের রায়, ছেলেবেলায় দূরদর্শনে শনি আর রবিবার সন্ধ্যার সিনেমা…  এলোমেলো ভাবনায় এসেছে সবই। আছে সুচিত্রা মিত্র কিংবা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কথা। যাঁর ছবি দেখেই ঋতুপর্ণ ঠিক করেছিলেন বড় হয়ে ‘ছবি করিয়ে’ই হবেন। শ্রীরামকৃষ্ণ থেকে গান্ধারী, দশরথের প্রায়োপবেশনের উল্লেখও হয়েছে নানা আলোচনায়।

চলচিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের যে ব্যক্তিগত জীবন, সে অংশ নিয়ে বাঙালির আজীবনের কৌতুহল, সেই রেগুলার সেক্সলাইফ নেই বলে জিম ট্রেইনারের অভিযোগ, তেমনি সোগোভিয়ায় হে ফেস্টিভ্যালে আয়োজকদের ‘ইন্টিমেট ইন্টেলেকচুয়াল কোম্পানি’র অযাচিত অফার। সবটাই সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠকদের পরিবেষণ করেছেন ঋতুপর্ণ।

বারবার ফিরে এসেছে রবীন্দ্রনাথ।বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ যখন পড়ি, তখন মনে হয় গোটা বাংলা ভাষাটাই তার রাজধানী। কেবল তার সিংহাসনটা খুঁজে পাইনা, সে কি কবিতায়, না প্রবন্ধে,না চিঠিতে, না গল্পে, কে জানে!”

বিশে ফেব্রয়ারিতে লেখা সেই একই কিস্তিতে আবারো ফিরেছেন প্রিয় শক্তি চাটুজ্জের কাছেও।’সে কি জানিতো না যত বড় রাজধানী, তত বিখ্যাত নয় হৃদয়পুর।’ রেইনকোট ছবিতে ব্যবহারের জন্য এই কবিতা নিজেই অনুবাদ করেছিলেন। তেমনি আওড়েছেন জয় গোস্বামীও, ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ নিয়ে, স্মৃতিকাতর বিমুগ্ধতায়’।

আছে আত্মস্বীকারোক্তি, সম্পাদক এবং চিত্রপরিচালক হিসেবে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের রূপ বদলে, হঠাৎ করে ক্যামেরার সামনে আসার গল্প।আছে ভ্রমণের গল্প, জোহানসবার্গ থেকে কোণার্ক, ইসরায়েল থেকে পুরী বা মাদ্রিদ অথবা শান্তিনিকেতন। কখনো শুটিঙের দরকারে, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শেষে।

আর আছেন মা-বাবা। মা ছিলেন একান্ত আশ্রয়।

শেষদিন অব্দি প্রথার বাইরে জীবন কাটানোর তাঁর সিদ্ধান্ত, স্বভাবপ্রণোদিত অস্বাভাবিকতার যে ট্রাজেডি সমাজের সামনে তাঁকে  দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আজন্ম, ফার্স্ট পার্সন-ই সেই একাকীত্বকে মেলে ধরেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen