মাছ VS চিকেন! কোনটা খেলে মোটা হবেন না, হার্ট ভাল থাকবে, হজমও হবে চটজলদি?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৫০: বাঙালি হোক বা না-হোক—মাছ নাকি চিকেন, কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর—তা নিয়ে তর্ক চলতেই থাকে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, দু’টিই প্রোটিনের দারুণ উৎস। তবে ওজন, হজম, হার্টের স্বাস্থ্য আর পুষ্টিগুণ—এই চার দিক থেকে দেখলে এগিয়ে কে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
মাছ পুষ্টিতে ও স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে এগিয়ে কতটা
১. কম ক্যালোরি, কম ফ্যাট—ওজন কমাতে সেরা: বেশিরভাগ মাছেই ফ্যাট ও ক্যালোরি চিকেনের তুলনায় কম। ফলে নিয়মিত মাছ খেলে মোটা হওয়ার ঝুঁকি কম।
২. হার্টের জন্য বেস্ট ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর: স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, ইলিশ—এসব মাছে থাকে ওমেগা–৩, যা হৃদ্যন্ত্র রক্ষা করে, কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. হজম সহজ — পাচনতন্ত্রে চাপ কম: মাছের প্রোটিন খুব দ্রুত ভেঙে যায়। তাই বয়স্ক, গ্যাস্ট্রিক–অ্যাসিডিটি বা হজমে সমস্যা যাঁদের বেশি, তাঁদের জন্য মাছ আদর্শ।
৪. ভিটামিন–ডি ও আয়োডিনের দারুণ উৎস:
হাড়, থাইরয়েড, ইমিউন সিস্টেম—সবই শক্ত রাখে।
চিকেন কোন দিকে এগিয়ে কোন দিকে পিছিয়ে
১. লিন প্রোটিন—পেশি গঠনে এগিয়ে: চিকেন ব্রেস্টে প্রোটিন বেশি, ফ্যাট কম। যারা জিম করেন বা মাংসপেশি বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য দারুণ।
২. ক্যালোরি মাছের চেয়ে একটু বেশি: তাই ভাজা বা গ্রেভি চিকেন বেশি খেলেই ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৩. হজমে মাছের মতো সহজ নয়: চিকেন প্রোটিন ভাঙতে শরীরের একটু বেশি সময় লাগে।
৪. হৃদ্স্বাস্থ্যে মাছের মতো সুরক্ষা দেয় না
ওমেগা–৩ খুব কম থাকায় হৃদ্রোগ প্রতিরোধে এটির ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম।
তাহলে মাছ বনাম চিকেন— কে এগিয়ে?
১. ওজন কমানোর ক্ষেত্রে
মাছ এখানে স্পষ্টতই এগিয়ে। কারণ মাছের ক্যালোরি ও ফ্যাট চিকেনের তুলনায় কম, বিশেষ করে সাদা মাংসের মাছ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ বা ফ্যাট কমাতে চাইলে মাছই সেরা বিকল্প।
চিকেনও ভালো, তবে পরিমাণ বেশি হলে বা তেলে রান্না করলে ক্যালোরি দ্রুত বেড়ে যায়।
২. হার্টের জন্য কোনটা ভালো?
হার্টের সুরক্ষায় মাছের জুড়ি নেই। তেলযুক্ত মাছে থাকা ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ কমায় ও হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চিকেনে ওমেগা–৩ খুব কম, তাই হৃদ্স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এটি মাছের সমান নয়।
৩. হজম কতটা সহজ?
মাছের প্রোটিন শরীর খুব দ্রুত ভেঙে নিতে পারে। তাই হজমে সমস্যা, অম্বল বা গ্যাস্ট্রিকের প্রবণতা যাঁদের, তাদের জন্য মাছ বেশি উপযোগী।
চিকেন হজম হয় ঠিকই, কিন্তু তুলনামূলকভাবে সময় বেশি লাগে।
৪. পেশি তৈরিতে কে বেশি কার্যকর?
চিকেন ব্রেস্টে লিন প্রোটিন প্রচুর থাকে, তাই যারা জিম করেন বা মাংসপেশি গড়তে চান, তাঁদের জন্য চিকেন বিশেষভাবে উপকারী।
মাছেও প্রোটিন আছে, কিন্তু পেশি তৈরির দিক থেকে চিকেন সামান্য এগিয়ে।
৫. পুষ্টিগুণের বৈচিত্র্যে কার জয়?
মাছ ভিটামিন–ডি, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ওমেগা–৩—এসব পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। চিকেনেও পুষ্টি আছে, তবে বৈচিত্র্য ও হার্ট-হেল্থ ফ্যাক্টরে মাছ বেশি পয়েন্ট পায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে মাছ ও চিকেন—দু’টিই দারুণ প্রোটিনের উৎস হলেও তুলনামূলক মূল্যায়নে কিছু জায়গায় স্পষ্ট পার্থক্য ধরা পড়ে।
ওজন কমানোতে মাছ এগিয়ে,
হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় মাছ অনেকটাই এগিয়ে,
হজমের ক্ষেত্রেও মাছই সবচেয়ে সহজ,
পেশি গঠনে এগিয়ে চিকেন,
আর পুষ্টির মোট পরিমাপে মাছই সবচেয়ে শক্তিশালী।
এই কারণেই সাধারণ স্বাস্থ্য, সঠিক ওজন ও হার্ট ভালো রাখতে মাছকেই সামগ্রিকভাবে এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যেভাবে রান্না করা হচ্ছে সেটাই শেষ কথা—কম তেলে, সেদ্ধ/গ্রিল/ঝোল ধরনের রান্নায় দু’টো খাবারই আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
সুতরাং, খাবারের বাটিতে মাছই পেল প্রথম স্থান; আর স্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতির সঙ্গে চিকেনও রইল মূল্যবান সঙ্গী হয়ে।