বেআইনি কাঠ মজুতের অভিযোগ, সোনা জয়ীর বাড়িতে নোটিশ বন দপ্তরের

সেই নোটিসে এক মাসের মধ্যে উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

July 14, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাড়িতে ‘বেআইনি’ কাঠ মজুত রাখার অভিযোগে ‘অজুর্ন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাথলিট স্বপ্না বর্মনকে নোটিস দিল বন দপ্তর। ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথেলনে সোনা জয়ী এই অ্যাথলিটের জলপাইগুড়ির কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে সোমবার হানা দেয় বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের একটি দল। বেলাকোবা রেঞ্জের আধিকারিক সঞ্জয় দত্তের নেতৃত্বে বনকর্মীদের দলটি তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করার সময় প্রচুর বেআইনি কাঠ দেখতে পায় বলে অভিযোগ বন দপ্তরের। মজুত কাঠ কী ভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই ক্রীড়াবিদ এবং তাঁর পরিবার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না-পারায় মজুত কাঠের উৎস জানতে নোটিস দিয়েছে বন দপ্তর। সেই নোটিসে এক মাসের মধ্যে উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘প্রথমে তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয় স্বপ্না বর্মনের পরিবার। শেষ পর্যন্ত সার্চ ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকতে হয় বনকর্মীদের।’

ঘটনার জেরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন স্বপ্না। লকডাউনের জেরে তিনি এখন জলপাইগুড়ির পাতকাটা এলাকার বাড়িতেই রয়েছেন। যে বাড়িতে তাঁরা থাকেন তার পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন বাড়ি। তবে তল্লাশির সময় ঘটনাস্থলে হাজির সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সামনে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি স্বপ্না। তার পরিবারের লোকেরা অবশ্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, মজুত কাঠের কাগজ তাঁদের কাছে রয়েছে। বাড়ি তৈরির কাজে ঘরের জিনিসপত্র অগোছালো হয়ে পড়ায় এখনই কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। ওই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বন দপ্তরের দলটি। তার পরেই নোটিস ধরানো হয় স্বপ্নার পরিবারকে। রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বেআইনি কাঠের খোঁজে বন দপ্তর কার বাড়িতে গিয়েছিল সেটা বড় কথা নয়। বনাঞ্চল নষ্ট করার চেষ্টা হলে বন দপ্তর কড়া হাতে দমন করবে। এই ব্যাপারে বন দপ্তরকে সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে।’

বর্ষায় তিস্তা নদী থেকে প্রতি বছরই ভেসে আসা গাছের গুড়ি, কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক। বেআইনি হলেও সেই সমস্ত কাঠ মিলে চেরাই করে দিব্যি বাজারে সস্তায় বিক্রিও হয়। এ সবের বাইরে অবশ্য উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল থেকে দামি গাছ কেটে এনে মিলে চেরাই করে বিক্রির করার কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি বনমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে গিয়ে দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, জঙ্গল রক্ষায় কোনওরকম আপসের প্রয়োজন নেই। কড়া হাতে দুষ্কৃতীদের দমন করতে হবে। বনমন্ত্রীর ওই হুঙ্কারের জেরেই বন দপ্তর উত্তরবঙ্গ জুড়েই বেআইনি কাঠের তল্লাশিতে নেমেছে।

সোমবার ওই তল্লাশি চালানো হয় জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাতকাটা এলাকায়। বেলাকোবার রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘বাড়িতে মজুত কাঠ দেখে আমাদের সন্দেহ, এই সমস্ত কাঠ নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এটা বেআইনি। স্বপ্না বর্মনের পরিবার সময় চেয়েছেন। ত্রিশ দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে।’ পাতকাটার গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের প্রধান প্রধান হেমব্রমের দাবি, ‘নদীতে ভেসে আসা ওই কাঠ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য মজুত করেছেন স্বপ্নার পরিবার।’

এলাকার অনেকেই অবশ্য এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। এশিয়াডে সোনা জেতার পরে স্বপ্নাকে সংবর্ধনা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি স্বপ্নার পরিবারের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাওয়ায় একটু ‘কড়কে’ দিতেই এ দিন বন দপ্তরের অভিযান বলে মনে করছেন অনেকে। স্বপ্নার পরিবারের পক্ষ থেকে এই ধরনের সম্ভাবনাকে অবশ্য গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার নেতা দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্যের প্রতিটি গ্রামেই, প্রতিটি বাড়িতে কাঠ মিলবে। তার মানে সেগুলি চোরাই কাঠ, এটা বলা যায় না। তবে এই রাজ্যের সরকার তো এসবই করছে। স্বপ্নার ঘটনাও তেমনই কিছু হবে বলে আমার সন্দেহ।’

তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, ‘স্বপ্না বর্মনের বাড়িতে কারা অভিযান চালিয়েছে, রাজ্য বন দপ্তর নাকি কেন্দ্রীয় কোন সংস্থা, সেটা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তবেই প্রতিক্রিয়া দেব।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen