অভিষেকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের, শোভনের প্রত্যাবর্তন কি সময়ের অপেক্ষা?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:২৫: তৃণমূলে ফিরছেন শোভন-বৈশাখী? বৃহস্পতিবার কালীঘাটের বাড়ির দপ্তরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর সেরকমই জল্পনা তৃণমূলের অন্দরে৷ এই বৈঠকে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভনের সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদিকদের শোভন বলেন,’দেখা করলাম। শারদোৎসবের প্রাক্কালে দীর্ঘক্ষণের সাক্ষাৎ হল। মতের আদানপ্রদান হল। আমি খুব মুগ্ধ। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন’। এছাড়াও পরে তিনি বলেন ‘‘মমতাদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে আমার নিরন্তর যোগাযোগ ছিলই। কিন্তু আট বছর পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ ভাবে মুখোমুখি দেখা হল। তার আগে যে হেতু অনেকটা সময় একসঙ্গে পথচলা ছিল, তাই এই সাক্ষাতে অনেক কিছু ঝালিয়ে নেওয়া গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অভিষেক এখন দলের পুরো সংগঠন সামলাচ্ছেন। সেটা একটা বিরাট কর্মকাণ্ড। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, তাঁর বিরাট কর্মকাণ্ডে যদি আমি সক্রিয় ভাবে সামান্যতম ভূমিকাও পালন করতে পারি, তা হলেও খুশি হব।’’
শোভনের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, ‘‘অনেকেই তো একটা দ্বিমেরু পরিস্থিতির কথা বলে নানা জল্পনা ছড়িয়ে রাখতেন। শোভন হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্তে তিনি কোথাও নেই- এ সব বলা হত। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গে শোভনের বৈঠক দেখে বুঝলাম, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক জানেন, কী ভাবে সঠিক লোকেদের কাছে টেনে নিতে হয়। এই বৈঠকে গত আট বছরের অনেক ক্ষতে প্রলেপ পড়েছে। ফলে অল্প কয়েক দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আবার সক্রিয় ভাবে রাজনীতির মাঠে দেখা যাবে বলে আশা রাখছি। এটা আমার কাছে শারদোৎসবের সেরা উপহার। কেটে গিয়েছে ভুল ধারণা, রটনা। শোভনের সক্রিয়তা এখন সময়ের অপেক্ষা’’
মঙ্গলবার রাত থেকে কলকাতায় নিম্নাচাপে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল গোটা শহর কলকাতা। তার পরেও পূর্ব কলকাতা, বেহালা-সহ বিভিন্ন এলাকার জল নামেনি। এখনও জলবন্দি যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী-সহ বহু এলাকা। বিরোধীদলের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। এর পাশাপাশি দলের অন্দরে ববির পুরসভা সংক্রান্ত কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূলের অন্দরে এখন জোর জল্পনা, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক আসলে ববি হাকিমকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল কি না। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়, আর সেই সমীকরণে কেউ নিশ্চিন্ত থাকেন, কেউ থাকেন অনিশ্চয়তায়। যাই হোক এই মুহূর্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দীর্ঘ বৈঠককে রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক মোহভঙ্গ ঘটে। তৃণমূলে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতেও উপস্থিত হয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে তিনি আবারও দলের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। তবু সেই প্রত্যাবর্তন বাস্তবায়িত হয়নি। গত বছর ২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের সভার আগে তাঁর ঘরে ফেরা নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও তা গুঞ্জনের গণ্ডি পেরোয়নি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর এবার ফের আলোচনায় শোভন।